১ “সেদিন আপিস যাবার পথে মৃত্যুঞ্জয় প্রথম মৃত্যু দেখল- অনাহারে মৃত্যু।”-এই দেখার ফলে মৃত্যুগুয়ের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া কী হয়েছিল?
উত্তর প্রেক্ষাপট: প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ ছোটোগল্পের প্রধান চরিত্র মৃত্যুঞ্জয় অফিস যাওয়ার পথে একদিন ফুটপাথে অনাহারে মৃত্যুর দৃশ্য দেখে। মন্বন্তরের সময়ে এরকম মৃত্যু নিয়মিত ঘটলেও তা ছিল মৃত্যুঞ্জয়ের জীবনের প্রথম অভিজ্ঞতা ।
শারীরিক প্রতিক্রিয়া:- আবেগপ্রবণ আদর্শবাদী মৃত্যুঞ্জয় তাই করুণ এই দৃশ্যটি দেখার কয়েক মিনিটের মধ্যেই প্রচণ্ড মানসিক বেদনাবোধের সঙ্গে শারীরিকভাবেও অসুস্থ হয়ে পড়ে। রীতিমতো কাহিল অবস্থায় অফিসে পৌঁছে সে অফিসের বাথরুমে বাড়ি থেকে খেয়ে-আসা খাবার বমি করে বের করে দেয়।
মানসিক প্রতিক্রিয়া:- পাশের কুঠুরি থেকে খবর নিতে আসে তার সহকর্মী- বন্ধু নিখিল। নিখিল দেখে মৃত্যুঞ্জয় ভাবলেশহীন চাহনিতে দেয়ালের দিকে তাকিয়ে আছে, সামনে টেবিলের ওপর শূন্য কাচের গ্লাস রাখা। তাকে দেখে নিখিলের মনে হয় যে, নিশ্চয়ই কোনো-এক বড়ো সমস্যায় পড়েছে মৃত্যুঞ্জয়। সেই সমস্যার নিরর্থক, অন্যায্য কঠোরতায় শার্সিতে আটকে-পড়া মৌমাছির মতো মৃত্যুঞ্জয় মাথা খুঁড়ছে। লেখক নিখিলের এই দেখার মধ্য দিয়ে মৃত্যুঞ্জয়ের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ার একটা স্বচ্ছ ধারণা সুন্দরভাবে পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন। এককথায় মৃত্যুঞ্জয়ের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ছিল হতাশার, যন্ত্রণার এবং অস্থিরতার ।
২. ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ ছোটোগল্প অবলম্বনে প্রথম অনাহার- মৃত্যু দেখার দিন মৃত্যুঞ্জয়ের সঙ্গে নিখিলের যে সাক্ষাৎকার হয়েছিল, তা নিজের ভাষায় বিবৃত করো। ?
উত্তর:- মৃত্যুঞ্জয়ের সঙ্গে নিখিলের সাক্ষাৎকার: মানিক
বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ ছোটোগল্পে অনাহারে মৃত্যু দেখার পর মৃত্যুঞ্জয় যখন সাময়িক অসুস্থ অবস্থায় অফিসে নিজের চেয়ারে বসেছিল, তখনই সেই ঘরে তার সহকর্মী-বন্ধু নিখিল প্রবেশ করে।
মৃত্যুঞ্জয়ের আর্তনাদ:-মৃত্যুঞ্জয়ের সংকটাপন্ন চোখ-মুখ এবং দেহভঙ্গি দেখে কৌতূহলী নিখিল তাকে কী হয়েছে প্রশ্ন করলে অন্যমনস্কভাবে, আর্তনাদের মতো সে বলে ওঠে, “মরে গেল। না খেয়ে মরে গেল।”।
নিখিলের উপলব্ধি:- আরও কিছু আনুষঙ্গিক প্রশ্ন করে নিখিল বুঝতে পারে যে, ফুটপাথে অনাহার-মৃত্যুর ব্যাপারটা মৃত্যুঞ্জয় কিছুতেই মন থেকে মেনে নিতে পারছে না। তার মাথার মধ্যে ঘুরছে নানা কথা, নানা প্রশ্ন। ফুটপাথে অনাহারে মৃত্যুর কদর্যতা, ক্ষুধার কষ্ট ও মৃত্যুর কষ্টের মধ্যে কোন্টা বেশি যন্ত্রণাদায়ক সেই ভাবনা তার মনকে আলোড়িত করছে।
মৃত্যুঞ্জয়ের প্রতিক্রিয়া:- ছলছল চোখে মৃত্যুঞ্জয় জানায় যে, সে বেঁচে থাকা সত্ত্বেও একজন মানুষ যে না খেতে পেয়ে মারা গেল-সে অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত সে কীভাবে করবে। এতদিন ধরে সব জেনেশুনেও নিতান্ত স্বার্থপরের মতো সে চারবেলা পেটপুরে খেয়ে এসেছে। কাজের লোকের অভাবে ত্রাণকার্য যেখানে ঠিকমতো পরিচালিত হচ্ছে না, সেখানে এতদিন ধরে সে নির্লজ্জের মতো তার অফুরন্ত অবসর কাটানোর কথা ভেবেছে।
শেষের কথা:- নিখিলকে এসব কথা বলে মৃত্যুঞ্জয় আসলে দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষগুলির প্রতি নিজের উদাসীনতাকেই ধিক্কার জানিয়েছে।
৩ “…শার্সিতে আটকানো মৌমাছির মতো সে মাথা খুঁড়ছে সেই স্বচ্ছ সমস্যার অকারণ অর্থহীন অনুচিত কাঠিন্যে।”-‘মৌমাছি’ বলতে এখানে কাকে বোঝানো হয়েছে? উদ্ধৃতিটি ব্যাখ্যা করো। ১+৪
উত্তর:- ‘মৌমাছি’র প্রকৃত পরিচয়: এখানে মৌমাছি বলতে ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ গল্পের মুখ্য চরিত্র মৃত্যুঞ্জয়কে বোঝানো হয়েছে।
ব্যাখ্যা: মন্বন্তরের সময় একদিন বাড়ি থেকে অফিস যাওয়ার পথে ফুটপাথে একটি অনাহারজনিত মৃত্যুদৃশ্য দেখে আবেগপ্রবণ মৃত্যুঞ্জয় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এই মানসিক আঘাতের ফলে মৃত্যুঞ্জয় শারীরিকভাবেও অসুস্থ হয়ে পড়ে। অফিসে গিয়ে নিজের কাজের ঘরে ঢুকে ধপ করে চেয়ারে বসে পড়ে সে। তারপর বাথরুমে গিয়ে বাড়ি থেকে খেয়ে-আসা যাবতীয় খাবার বমি করে ফেলে। বাথরুম থেকে ফিরে এসে কাচের গ্লাসে জল খেতে খেতে উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে দেয়ালের দিকে। ‘পচা ঐতিহ্য আদর্শবাদের কল্পনা-তাপস’ মৃত্যুঞ্জয়ের এই মৃত্যুদৃশ্য দেখার পর থেকেই বিবেক দংশন শুরু হয়। তার মনে অনাহার মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নানা প্রশ্ন জাগে। সে ভাবতে চেষ্টা করে খিদের জ্বালা আর মৃত্যুযন্ত্রণার মধ্যে কোন্টা বেশি কষ্টকর। সে আরও ভাবে যে, দরিদ্র মানুষের জীবনপ্রণালী সম্পর্কে তার উদাসীনতাই হয়তো এইরকম মৃত্যুর কারণ। কিন্তু এই সমস্যার সমাধান বা প্রায়শ্চিত্তের কোনো যথাযথ উপায় সে খুঁজে পায় না। কঠোর বাস্তবের সমাধানহীন এক প্রশ্নচিহ্নের সামনে দাঁড়িয়ে বিভ্রান্ত মৃত্যুঞ্জয় শার্শিতে আটকে-পড়া মৌমাছির মতো মাথ্য খুঁড়তে থাকে।
৪.”অন্য সকলের মতো মৃত্যুঞ্জয়কে সেও খুব পছন্দ করে।”- কার কথা বলা হয়েছে? তার মৃত্যুঞ্জয়কে পছন্দ করার যে কারণ লেখক আলোচনা করেছেন এই প্রসঙ্গে সেটির বিবরণ দাও? ১+৪
উত্তর:- উদ্দিষ্ট ব্যজি:- মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ ছোটোগল্প থেকে সংকলিত এই উদ্ধৃতিটিতে মৃত্যুঞ্জয়ের সহকর্মী-বন্ধু নিখিলের কথা বলা হয়েছে।
মৃত্যুঞ্জয়কে পছন্দ করার কারণ:- মৃত্যুঞ্জয় ছিল ন্যায়নীতিবোধসম্পন্ন, ধীরস্থির, নির্বিরোধী, সহানুভূতিশীল এক সাদাসিধে যুবক। কিন্তু শুধু তার এইসব ইতিবাচক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের জন্যই যে নিখিল তাকে পছন্দ করত, তা নয়। মানবসভ্যতার নষ্ট হয়ে যাওয়া সবচেয়ে প্রাচীন যে ঐতিহ্য-আদর্শবাদ, তার কল্পনায় এবং সাধনায় মৃত্যুঞ্জয় নিজেকে সঁপে দিয়েছিল বলেই নিখিল তাকে খুব পছন্দ করত। অবশ্য, মৃত্যুঞ্জয় যদি দুর্বল-মনের কল্পনাবিলাসী আদর্শবাদী যুবক হত, তাহলে তাকে পছন্দ করার প্রসঙ্গ আসত না। দুটো কথার দ্বারা তাকে উত্ত্যক্ত করলেই তার মনের রাশি রাশি অন্ধকার বেরিয়ে এসে তাকে অবজ্ঞার পাত্র করে তুলত। মৃত্যুঞ্জয়ের মনের গঠন-প্রকৃতি তেমন নির্জীব বা শিথিল নয়। তার হৃদয় ও মস্তিষ্ক যথেষ্ট গতিশীল। তার হৃদয়ে শক্তির একটা উৎস রয়েছে। অসম্ভবকে সম্ভব করতে যে শক্তির প্রয়োজন হয়, সেই চেষ্টায় জগতে যে শক্তি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে গেছে, তেমনই এক শক্তির অধিকারী ছিল সে। এই বিশেষ শক্তির অধিকারী বলেই মৃত্যুঞ্জয়ের প্রতি নিখিল মৃদু হিংসা পোষণ করত, ভাবত, সে নিজে মৃত্যুঞ্জয় হলে খারাপ হত না। নিখিল যে মৃত্যুঞ্জয়কে খুব পছন্দ করে এবং ভালোও বাসে, তার কারণ হিসেবে লেখক এ বিষয়গুলিই উল্লেখ করেছেন।
৫.”অথচ নিখিল প্রশ্ন করলে সে জবাবে বলল অন্য কথা।”-নিখিল মৃত্যুপ্তয়কে কেন প্রশ্ন করেছিল? মৃত্যুঞ্জয় কেন ‘অন্য কথা’ বলে? ৩+২
উত্তর:- নিখিলের প্রশ্নের প্রেক্ষাপট:- মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কে বাঁচায়,কে বাঁচে’ গল্পে ফুটপাথে অনাহার-মৃত্যু দেখে মৃত্যুঞ্জয়ের মধ্যে এক তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছিল। এই দৃশ্য তাকে শারীরিক এবং মানসিকভাবে বিধ্বস্ত করে তুলেছিল। সমস্ত বিষয়টা খতিয়ে দেখে নিখিলের মনে হয়েছিল, ফুটপাথে অনাহারে মৃত্যুর বিষয়টি সম্পর্কে মৃত্যুঞ্জয় আসলে স্পষ্ট ধারণা করতেই পারছে না। মৃত্যুঞ্জয় হয়তো ফুটপাথের মানুষগুলির জীবনযাপনের বীভৎসতা, ক্ষুধা অথবা মৃত্যুর রূপ বোঝার চেষ্টা করছে। “না খেয়ে মরা কী ও কেমন?”-এ প্রশ্নের উত্তরও সে খুঁজে চলেছে। তাই সমস্ত বিষয়টি ভালোভাবে জেনে নেওয়ার জন্যই নিখিল মৃত্যুঞ্জয়কে প্রশ্ন করেছিল।
মৃত্যুঞ্জয়ের ‘অন্য কথা’ বলার কারণ:- নিখিল যখন এই প্রশ্নগুলি মৃত্যুঞ্জয়ের সামনে রাখে, তখন জবাবে সে ‘অন্য কথা’ বলে। সে পালটা নিখিলকে জিজ্ঞাসা করে যে, সে নিজে দিব্যি খেয়েপরে বেঁচে রয়েছে, অথচ একটা লোক না খেয়ে মরে গেল-এ অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত কী। সে নিজে চারবেলা খাচ্ছে আর কিছু মানুষ একবেলাও খেতে পাচ্ছে না-এই বৈষম্য তাকে কাতর করে তোলে। একদিকে সে তার ধরাবাঁধা জীবনে দৈনন্দিন কাজ শেষ করে নিশ্চিন্ত অবসর কাটায়, অন্যদিকে লোকের অভাবে ত্রাণকার্য সঠিকভাবে চালানো যায় না- এ কথা মনে হতেই মৃত্যুঞ্জয় নিজেকে ধিক্কার দেয়।
৬. “মরে গেল। না খেয়ে মরে গেল।” বক্তা কে? এর মধ্য দিয়ে বক্তার চরিত্রের কোন্ দিক ফুটে উঠেছে? ১+৪
উত্তর:- বক্তা:- মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ গল্পের উল্লিখিত মন্তব্যটির বস্তা কাহিনির কেন্দ্রীয় চরিত্র মৃত্যুঞ্জয়।
চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য:- অফিসে যাওয়ার সময় মৃত্যুঞ্জয় জীবনে প্রথমবার যেদিন ফুটপাথে অনাহারে মৃত্যুর দৃশ্য প্রত্যক্ষ করল, সেদিন তার মনের মধ্যে প্রবল প্রতিক্রিয়া হয়েছিল। প্রাথমিভাবে মানসিক বেদনাবোধের সঙ্গে শারীরিক কষ্টবোধের শিকার হয়েছিল সে। তারপরে এক শূন্যতা যেন তাকে গ্রাস করেছিল। বন্ধু ও সহকর্মী নিখিল বুঝতে পেরেছিল যে, “শার্সিতে আটকানো মৌমাছির মতো সে মাথা খুঁড়ছে সেই স্বচ্ছ সমস্যার অকারণ অর্থহীন অনুচিত কাঠিন্যে।” নিখিল এই বিষয়টি বুঝে নিতে চায় বন্ধু মৃত্যুঞ্জয়ের কাছে। তার প্রত্যুত্তরেই যেন মৃত্যুঞ্জয় অন্যমনস্কভাবে অস্পষ্ট ভঙ্গিতে আর্তনাদ করে ওঠে। মৃত্যুঞ্জয় যেন এই মৃত্যুকে, বিশেষত ক্ষুধার কারণে মৃত্যুকে মানতে পারে না। মৃত্যুঞ্জয়ের মধ্যবিত্ত জীবনদর্শনে অভাব থাকলেও অনাহার ছিল না। ক্ষুধার যন্ত্রণায় মৃত্যু তাই এক বীভৎস চেহারা নিয়ে সম্ভবত তার সমস্ত চেতনাকে অধিকার করে নেয়। নিজের চারবেলার উদরপূর্তিতে তার আত্মগ্লানি হয়। এক অসহায় মানুষের আত্মবিলাপ য়েন শোনা যায় মৃত্যুঞ্জয়ের মন্তব্যে। আবার তার মধ্যেই তার সংবেদশীল, সহমর্মী, মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
৭.”এ অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত কী?”- কোন্ অপরাধের কথা বলা হয়েছে? বক্তার এই অপরাধবোধের কারণ কী?
অথবা, “এ অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত কী?”-কে, কোন্ অপরাধের প্রায়শ্চিত্তের কথা বলেছেন? বক্তা নিজেকে অপরাধী মনে করেছেন কেন? ১+২+২
উত্তর:- উদ্দিষ্ট অপরাধের পরিচয়:- মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ গল্পে মৃত্যুঞ্জয় অফিসে যাওয়ার পথে ফুটপাথে এক অনাহারে মৃত্যুর দৃশ্য দেখে। নিজেদের চারবেলা ‘পেট ভরে’ খাওয়া এবং দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষদের মৃত্যু বিষয়ে উদাসীনতাকে মৃত্যুঞ্জয়ের ‘অপরাধ’ বলে মনে হয়।
অপরাধবোধের কারণ:- মানুষের অনাহারে মৃত্যুর ঘটনা মৃত্যুঞ্জয়ের সমস্ত চেতনাকে আচ্ছন্ন করে তোলে। শারীরিক কষ্টবোধের সঙ্গে মানসিক যন্ত্রণা তীব্র হয়ে ওঠে। বন্ধু ও সহকর্মী নিখিল তাকে বলেছে-“মানবসভ্যতার সবচেয়ে প্রাচীন ও সবচেয়ে পচা ঐতিহ্য আদর্শবাদের কল্পনা-তাপস।” এই আদর্শের কারণেই সে মৃত্যুযন্ত্রণা, ক্ষুধার যন্ত্রণা ইত্যাদি নিয়ে ভাবতে শুরু করে। তারা ভালোভাবে বেঁচে আছে, অথচ কিছু মানুষ না খেয়ে মরে গেল-এই বেদনা ও বৈষম্যে সে ভাবিত হয়। আর সব জেনেশুনেও সে যে চারবেলা পেট ভরে খেয়েছে তা তাকে গ্লানিজর্জর করে তোলে। আদর্শবোধের তীব্র তারণা। সব মিলিয়ে নিজের ব্যক্তিগত এবং শ্রেণিগত উদাসীনতা মৃত্যুঞ্জয়কে অনুশোচনায় বিদ্ধ করে। যখন একদিকে লোকের অভাবে যথেষ্ট ত্রাণকার্য চালানো যাচ্ছে না-সেই সময়ে কিছু লোক সময় কাটানোর উপায় খুঁজে পাচ্ছে না-এই আচরণ মৃত্যুঞ্জয় মেনে নিতে পারেনি। নিজেকে ধিক্কার জানিয়েছে সে। আদর্শবোধের তীব্র তাড়নাই মৃত্যুঞ্জয়কে অপরাধী করে তুলেছে।
৮. “নিখিল ভাবছিল বন্ধুকে বুঝিয়ে বলবে, এ। ভাবে দেশের লোককে বাঁচানো যায় না।”-কোন প্রসঙ্গে নিখিলের এই ভাবনা? এই ভাবনার মাধ্যমে নিখিলের চরিত্রের কোন্ বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পেয়েছে? ১+৪
উত্তর, প্রসঙ্গ:- মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কে ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ ছোটোগল্পে উত্তর আমরা দেখি যে, ফুটপাথে অনাহার মৃত্যু দেখার পর অফিসের মাইনের দিন মৃত্যুঞ্জয় সব টাকা নিখিলের হাতে দেয় ত্রাণ তহবিলে দান করার জন্য। বিস্মিত নিখিলের প্রশ্নের উত্তরে সে জানায় যে তারা সস্ত্রীক একবেলার ভাত না খেয়ে নিরন্ন মানুষদের দান করে দিচ্ছে। টুনুর মা অসুস্থ বলে মৃত্যুঞ্জয় তাকে খেতে বললেও পতিব্রতা স্ত্রী তা শোনে না। এই প্রসঙ্গেই নিখিল এমনটা ভাবছিল।
নিখিলের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য:-মৃত্যুঞ্জয়ের সহকর্মী নিখিলও একজন হৃদয়বান, সামাজিক মানুষ। কিন্তু অনাহার-মৃত্যু দেখে ভেঙে-পড়া মৃত্যুঞ্জয়কে লক্ষ করে তার মনে হয়েছে যে, সব মানুষের সব সহানুভূতি অনাহারীদের খিদের আগুনে ঢাললেও তা নিভবে না, উলটে তা ইম্মনই পাবে। তার মতে ভিক্ষাদানের মতো পাপকর্ম সাধারণ মানুষের কাছে সৎকর্ম হিসেবে বিবেচিত হয় বলেই মানুষের অন্নের দাবি প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। ত্রাণের ফলে কিছু লোক খেতে পেলেও আড়ালে-থাকা আরও অনেক মানুষ না খেতে পেয়েই মারা যায়। তার মতে, এই অবস্থায় আহার বিলাসিতা অন্যায় হলেও উপোস করে মারা যাওয়াটাও একান্তই অনুচিত। কারণ, নীতিধর্ম নয়, সমাজধর্মের দিক থেকেই নিখিল মনে করে, দশজনকে খুন করার থেকে বড়ো অপরাধ হল নিজে না খেয়ে মরা। মৃত্যুঞ্জয়ের ভাববাদী আদর্শের বিপরীতে এই ভাবনার মাধ্যমে নিখিলের চরিত্রের বাস্তববাদী বৈশিষ্ট্যই প্রকাশিত হয়েছে।
৯.সেদিনের পর থেকে মৃত্যুবায়ের মুখ বিষণ্ণ গম্ভী কোন্ দিনের। গম্ভীর হয়ে আছে।”-কো মৃত্যুঞ্জয়ের মুখ কেন বিষণ্ণ গম্ভীর হয়ে গিয়েছিল? ১+৪
উত্তর:-মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ ছোটোগল্পের প্রধান চরিত্র মৃত্যুঞ্জয় মন্বন্তরের সময়কালে যেদিন বাড়ি থেকে অফিস যাওয়ার পথে ফুটপাথে একটি অনাহার-মৃত্যুর বীভৎস দৃশ্য দেখেছিল, সেই দিনটির কথাই প্রশ্নোদ্ভূত অংশে বলা হয়েছে।
মৃত্যুঞ্জয়ের মুখ বিষণ্ণ ও গম্ভীর হয়ে ওঠার কারণ:- এতকাল অবধি মৃত্যুঞ্জয় না-খেতে-পেয়ে মরার কথা কেবল শুনেছিল বা পড়েছিল। মন্বন্তরের সময় প্রায়শই ফুটপাথে অনাহার-মৃত্যু ঘটলেও মৃত্যুঞ্জয়ের জীবনে প্রথমবারের জন্য সেই অভিজ্ঞতা হয়েছিল।
মৃত্যুর বীভৎসতা:- মৃত্যুঞ্জয় ছিল ন্যায়নীতিবোধসম্পন্ন, অনুভূতিশীল, সাদাসিধে ভালোমানুষ। মানবসভ্যতার নষ্ট হয়ে যাওয়া যে সুপ্রাচীন ঐতিহ্য আদর্শবাদ তার কল্পনায় এবং সাধনায় মৃত্যুঞ্জয় নিজেকে সম্পূর্ণভাবে সঁপে দিয়েছিল। জীবনে প্রথম ফুটপাথে অনাহার-মৃত্যুর বীভৎস দৃশ্য প্রত্যক্ষ করার পরে মৃত্যুঞ্জয়ের মনে এই অনাহার-মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নানা প্রশ্ন জেগে ওঠে।
উদাসীন জীবনযন্ত্রণা:- খিদের যন্ত্রণা না মৃত্যুযন্ত্রণা কোন্টা বেশি কষ্টকর তা নিয়েও তার মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। তার মনে হয় তার মতো স্বচ্ছল মধ্যবিত্তদের দরিদ্র মানুষের জীবনযন্ত্রণা সম্পর্কে উদাসীনতাই হয়তো এর কারণ। এই মৃত্যুর ঘটনাটা মৃত্যুঞ্জয়কে এমন আহত করেছিল, অপরাধবোধে দীর্ণ করে দিয়েছিল যে, তারপর থেকেই সে বিষণ্ণ ও গম্ভীর হয়ে গিয়েছিল।
১০.মৃত্যুঞ্জয়ের চোখ ছল ছল করছে দেখে নিখিল চুপ করে থাকে।”-মৃত্যুায়ের চোখ ছলছল করতে থাকার কারণ কী? চুপ করে থাকা সত্ত্বেও নিখিল মনে মনে কী ভাবতে লাগল? ২+৩
উত্তর:- মৃত্যুঞ্জয়ের চোখ ছলছল করার কারণ:- ফুটপাথে অনাহারে মৃত্যুর ঘটনা মৃত্যুঞ্জয়ের মানসিক ও শারীরিক কষ্টের কারণ হয়েছে। নিখিলের কাছে এই ঘটনা সাধারণ ও সহজবোধ্য বলে মনে হলেও মৃত্যুঞ্জয়ের তা মনে হয়নি। সে এতদিন এই ব্যাপারে মাথা না ঘামিয়ে ভূরিভোজ করে নিশ্চিন্তে দিন কাটিয়েছে। নিজের এই উদাসীনতার জন্য সে বেদনাহত এবং অনুতপ্ত। সে নিজেকে অপরাধী বলে মনে করে। ওই অপরাধের কী প্রায়শ্চিত্ত হতে পারে, সেই ভাবনা তাকে আলোড়িত করে। এই নির্লজ্জ অমানবিক আচরণের জন্য নিজেকে ধিক্কার জানাতেও মৃত্যুঞ্জয় পিছপা হয় না। মানসিকভাবে বিষন্ন মৃত্যুঞ্জয়ের অনুতাপে চোখ ছলছল করে।
নিখিলের ভাবনা:- মৃত্যুঞ্জয়ের ছলছল চোখ দেখে নিখিল চুপ করে থাকে। কিন্তু মৃত্যুঞ্জয়ের দরদের ছোঁয়ায় তারও মন খারাপ হয়। তার মনে হয় দুর্ভিক্ষের দেশে সমস্ত দরদ, সব সহানুভূতি উজাড় করে ঢেলে দিলেও অপরিসীম ক্ষুধার আগুন নিভবে না বরং তা ক্ষুধার আগুনকে ইন্ধন জোগাবে। নিখিলের মতে ভিক্ষে দেওয়া অস্বাভাবিক পাপ কাজ, কিন্তু তাকে পুণ্যকাজের পর্যায়ে উন্নীত করার ফলে মানুষের জীবনধারণের অন্নের প্রতি ন্যায্য দাবি জন্মায় না। ভিক্ষে দিয়ে দেশব্যাপী ক্ষুধার অন্ন জোগানো যায় না। এই রূঢ় বাস্তবকে আধ্যাত্মিক নীতি করে মধুর প্রলেপ দেওয়া আসলে অনিয়মের নামান্তর। চিতার আগুনে কোটি কোটি মৃতদেহ পোড়ানো হলেও পৃথিবীতে যত জ্যান্ত মানুষ আছে, তাদের পুড়িয়ে ছাই করার ক্ষমতা চিতার আগুনের আছে। আসলে মানুষের সীমাহীন খিদে সেই আগুনে জ্বালানি রূপেই কাজ করে।
১১.”কদিন পরেই মাইনের তারিখ এল।”-মাইনের দিনের ঘটনার। পরিপ্রেক্ষিতে নিখিল ও মৃত্যুঞ্জয়ের বক্তব্য ও মনোভাব বিশ্লেষণ করো ?
উত্তর:- প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে গল্পে মৃত্যুঞ্জয় ও নিখিল একই অফিসের কর্মী। প্রতি মাসে নিখিলকে তিন জায়গায় কিছু কিছু টাকা পাঠাতে হয়। টাকা পাঠানোর জন্য মানি-অর্ডারের ফর্ম লিখতে গিয়ে নিখিল ভাবল যে, এবার তিনটে সাহায্যই পাঁচ টাকা করে কমিয়ে দেবে কি না। এমন সময় মৃত্যুঞ্জয় নিখিলের ঘরে এসে একতাড়া নোট বের করে। টাকাটা দুর্ভিক্ষপীড়িতদের জন্য কোনো রিলিফ ফান্ডে দিয়ে আসার অনুরোধ জানায়। নিখিল ধীরে ধীরে গুনে দেখে মৃত্যুঞ্জয় সমস্ত মাসমাইনেই দান করেছে। বন্ধু হিসেবে নিখিল তাকে বোঝায় যে তার ওপর সংসারে নজন লোকের দায়িত্ব রয়েছে। মাইনের টাকায় মাস চলে না। প্রতি মাসেই তাকে ধার করতে হয়। সেই পরিস্থিতিতে সারা মাসের বেতন রিলিফ ফান্ডে দেওয়া মোটেই সমীচীন নয়। মৃত্যুঞ্জয় জানায় যে সে কিছু একটা করতে চায়। তার রাতে ঘুম হচ্ছে না। খেতে বসলে খেতে পারছে না। তারা স্বামী-স্ত্রী একবেলা খায়, আর-এক বেলার খাবার ক্ষুধার্তদের বিলিয়ে দেয়। এ কথা শুনে নিখিল বলে মৃত্যুঞ্জয়ের স্ত্রী টুনুর মায়ের যা স্বাস্থ্য তাতে একবেলা না খেয়ে পনেরো-কুড়ি দিনই কাটাতে পারবে।
নিখিল ভাবছিল সে মৃত্যুঞ্জয়কে বোঝাবে যে এভাবে দেশের লোককে বাঁচানো যায় না। রিলিফ বা ত্রাণকার্য প্রকৃতপক্ষে একজনের খাবার আর-এক জনকে। খাওয়ানো। এতে চোখের সামনে যারা আছে তারাই বাঁচবে, দূরের মানুষ খাবার না পেয়ে মরবে। কিন্তু এসব কোনো কথাই তার মুখ থেকে বেরোল না। নিখিল জানায় যে ভুরিভোজ করে খাওয়া অন্যায়। তা বলে না খেয়ে মরাও উচিত নয়। নীতিধর্মের দিক থেকে নয়, সমাজধর্মের দিক থেকে বিচার করলে দশজনকে খুন করার পাপের চেয়ে না খেয়ে নিজেকে মেরে ফেলা বড়ো পাপ। নিখিলের এই মনোভাব ও বক্তব্যে ক্ষুদ্ধ হয়ে মৃত্যুঞ্জয় জানায় যে, এরূপ আচরণ পাশবিক স্বার্থপতার পরিচয়।
১২.”মৃত্যুঞ্জয়ের বাড়ির অবস্থা শোচনীয়।”-মৃত্যুঞ্জয় কে? তার বাড়ির অবস্থা শোচনীয় কেন?
উত্তর:- মৃত্যুঞ্জয়ের পরিচয়:- মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ ছোটোগল্পের প্রধান চরিত্র হল মৃত্যুঞ্জয়।
বাড়ির অবস্থা শোচনীয় হওয়ার কারণ:- মৃত্যুঞ্জয় ফুটপাথে অনাহার- মৃত্যুর দৃশ্য দেখার পর থেকে ভেতরে-বাইরে ক্রমশ পালটে যেতে থাকে। অপরাধবোধে দীর্ণ হয়ে সে বাড়িতে ভালো করে খেতে ও ঘুমোতে পারে না। একবেলা সস্ত্রীক না খেয়ে সেই খাবার সে অভুক্তদের বিলোনো শুরু করে। এমনকি, মাইনের দিন নিখিলের মাধ্যমে পুরো বেতনটাই সে ত্রাণ-তহবিলে দান করে দেয়। এদিকে অফিসে তার আসা-যাওয়ারও ঠিক থাকে না। কাজে ভুল করে, প্রায়ই চুপচাপ বসে থেকে ভেবে চলে সে। বাড়িতেও বিশেষ না থেকে শহরের গাছতলায়, ডাস্টবিনের ধারে বা ফুটপাথে পড়ে-থাকা মন্বন্তরগ্রস্ত মানুষগুলিকে দেখতে সে ঘুরে বেড়াতে থাকে। মৃত্যুঞ্জয়ের এমন অবস্থার জন্যই তার বাড়ির শোচনীয় অবস্থা হয়েছিল। মৃত্যুঞ্জয়ের এই অবস্থায় তার স্ত্রী শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে। মৃত্যুওয়ের ছেলেমেয়েরা খিদের জ্বালায় মাঝেমধ্যেই চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। মৃত্যুঞ্জয়ের অনুপস্থিতিতে তার পরিবারের লোকেদের এমন শোচনীয় অবস্থা হয়েছিল।
১৩.দিন দিন কেমন যেন হয়ে যেতে লাগল মৃত্যুঞ্জয়।”-মৃত্যুঞ্জয় কেমন হয়ে যেতে লাগল? তার এমন হয়ে যাওয়ার কারণ কী?
উত্তর:- মৃত্যুঞ্জয়ের পরিবর্তন:- মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ ছোটোগল্প থেকে উদ্ধৃতিটি সংকলিত হয়েছে। অনাহারে মৃত্যু দেখার কিছুদিন পরই অফিসের মাইনের তারিখ আসে। সে-দিন মৃত্যুঞ্জয় তার মাইনের পুরো টাকাটা নিখিলের মাধ্যমে রিলিফফান্ডে দান করে দেয়। সে-দিনের পর থেকেই মৃত্যুঞ্জয় কেমন যেন হয়ে যেতে থাকে। অফিসে আসতে দেরি করে, কাজে ভুল করে, প্রায়ই চুপচাপ বসে বসে ভাবে, তারপর একসময় বেরিয়ে যায়। বাড়িতেও তাকে বিশেষ একটা পাওয়া যায় না। দিনরাত শহরের ফুটপাথ ধরে সে হেঁটে বেড়ায়। বড়ো গাছের নীচে, ডাস্টবিনের ধারে বা খোলা ফুটপাথে যেসব দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষ পড়ে থাকে, তাদের শুধু দাঁড়িয়ে থেকে লক্ষ করে সে। এইসব অনাহারীরা সন্ধ্যা থেকেই শুয়ে থাকে, কিন্তু অনেক রাতে, দোকানপাট বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর হামাগুড়ি দিয়ে সামনের কোনো রোয়াকে বেঁচে থাকার অসম লড়াই ছিল তার পর্যবেক্ষণের বিষয়। এই মানুষগুলির সঙ্গে প্রথম দিকে যতটা সম্ভব সে আলাপ করত, কিন্তু পরবর্তীতে তা বন্ধ করে দিয়েছে। কারণ, মৃত্যুঞ্জয় দেখেছে যে, তারা সকলে একই কথা বলে এবং তাদের ভাষা ও বলার ভঙ্গি পর্যন্ত একইরকম। নেশাগ্রস্ত আচ্ছন্ন মানুষের মতো সেই একই ভাগ্যের এবং দুঃখের কাহিনি নালিশহীন, প্রতিবাদহীন। কীভাবে তাদের জীবনের সব কিছু ওলটপালট হয়ে গেল তা তারা জানতে কিংবা বুঝতে চায়নি কিন্তু সব কিছুই মেনে নিয়েছে। ভাগ্যের কাছে এই অসহায় আত্মসমর্পণ মৃত্যুওয়ের পছন্দ হয়নি। সে চেয়েছিল সমস্যার প্রকৃত উৎসগুলি এই মানুষরা বুঝুক, নাহলে তার সমাধান অসম্ভব। সেই কারণেই প্রতিবাদহীন এই মানুষগুলির সঙ্গে কথা বলা সে বন্ধ করে দিয়েছিল ।