Higher Secondary History

অতীত স্মরণ – উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস প্রথম অধ্যায় প্রশ্ন ও উত্তর Higher Secondary History Chapter One Question and Answer

অতীত স্মরণ উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস প্রথম অধ্যায় প্রশ্ন ও উত্তর

1. ‘হিস্ট্রি’ শব্দটি কোন ভাষা থেকে উদ্ভূত?
ক) ল্যাটিন
খ) গ্রিক
গ) হিব্রু
ঘ) আরবি
উত্তর: খ) গ্রিক

2. ‘মিথ’ শব্দের অর্থ কী?
ক) ইতিহাস
খ) কল্পকাহিনী
গ) বিজ্ঞান
ঘ) দর্শন
উত্তর: খ) কল্পকাহিনী

3. ‘রাজতরঙ্গিণী’ গ্রন্থের রচয়িতা কে?
ক) কলহন
খ) বিলহন
গ) কালিদাস
ঘ) বাণভট্ট
উত্তর: ক) কলহন

4. ‘হিস্ট্রি অব ব্রিটিশ ইন্ডিয়া’ গ্রন্থটি কে রচনা করেন?
ক) জেমস মিল
খ) জন স্টুয়ার্ট মিল
গ) ভিনসেন্ট স্মিথ
ঘ) এলফিনস্টোন
উত্তর: ক) জেমস মিল

5. ‘What is History’ গ্রন্থের লেখক কে?
ক) ই. এইচ. কার
খ) বি. আর. গ্রোথ
গ) জে. বি. বিউরি
ঘ) এলটন
উত্তর: ক) ই. এইচ. কার

6. ‘ইতিহাসমালা’ গ্রন্থটি কে রচনা করেন?
ক) উইলিয়াম কেরি
খ) লালবিহারী দে
গ) ডব্লিউ. ডব্লিউ. হান্টার
ঘ) হেনরি প্যাটুলো
উত্তর: ক) উইলিয়াম কেরি

7. ‘তহকিক-ই-হিন্দ’ গ্রন্থের রচয়িতা কে?
ক) ইবন বতুতা
খ) আলবেরুনি
গ) ইবন খালদুন
ঘ) সু-মা-কিয়েন
উত্তর: খ) আলবেরুনি

8. ‘ইলিয়াড’ ও ‘ওডিসি’ মহাকাব্য দুটি কে রচনা করেন?
ক) হোমার
খ) হেরোডোটাস
গ) থুকিডিডিস
ঘ) সোফোক্লিস
উত্তর: ক) হোমার

9. ‘লুভর মিউজিয়াম’ কোথায় অবস্থিত?
ক) লন্ডন
খ) প্যারিস
গ) রোম
ঘ) বার্লিন
উত্তর: খ) প্যারিস

10. ‘মিউজিয়াম’ শব্দটি কোন ভাষা থেকে এসেছে?
ক) ল্যাটিন
খ) গ্রিক
গ) হিব্রু
ঘ) আরবি
উত্তর: খ) গ্রিক

11. ‘মিউজিওলজি’ কী?
ক) সঙ্গীতবিদ্যা
খ) জাদুঘরবিদ্যা
গ) প্রত্নতত্ত্ব
ঘ) লোককথা
উত্তর: খ) জাদুঘরবিদ্যা

12. ‘ইতিহাসের জনক’ বলা হয় কাকে?
ক) থুকিডিডিস
খ) হেরোডোটাস
গ) হোমার
ঘ) সু-মা-কিয়েন
উত্তর:-হেরোডোটাস

13.‘ ইতিহাসমালা ‘ রচনা করেছিলেন –
(A) হেরোডোটাস
(B) সন্ধ্যাকর নন্দী
(C) উইলিয়াম কেরি
(D) কলহন ।
উত্তরঃ (C) উইলিয়াম কেরি

14.একজন মানবতাবাদী ব্রিটিশ ঐতিহাসিক হলেন—
(A) উইলিয়াম হান্টার
(B) উইলিয়ম জোন্স
(C) জেমস মিল
(D) ম্যাক্সমুলার
উত্তরঃ (C) জেমস মিল

15.ভারতে এশিয়াটিক সোসাইটি
(A) ১৭৯০ খ্রিস্টাব্দে
(B) ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে
(C) ১৮১০ খ্রিস্টাব্দে
(D) ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে ।
উত্তরঃ (B) ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে

16.কলকাতায় ফোর্ট উইলিয়ম কলেজের প্রতিষ্ঠা হয়—
(A) ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দে
(B) ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে
(C) ১৭৮৫ খ্রিস্টাব্দে
(D) ১৭৮৬ খ্রিস্টাব্দে ।
উত্তরঃ (B) ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে

17.ভারতের বৃহত্তম মিউজিয়ামটি হলো—
(A) দ্য ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম
(B) দিল্লি মিউজিয়াম
(C) ন্যাশনাল মিউজিয়াম মুম্বই
(D) বিড়লা মিউজিয়াম ।
উত্তরঃ (A) দ্য ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম

18.স্মৃতিকথা হলো—
(A) লোককথা
(B) জনশ্ৰুতি
(C) মৌখিক উপাদান
(D) কল্পকাহিনি ।
উত্তরঃ (C) মৌখিক উপাদান

19.ইতিহাসের জনক ‘ বলা হয়—
(A) থুকিডিডিসকে
(B) রুশোকে
(C) প্লিনিকে
(D) হেরোডোটাসকে ।
উত্তরঃ (D) হেরোডোটাসকে ।

20.কোন লোককথার মূল চরিত্র মানুষ ?
(A) রূপকথার
(B) পরিকথার
(C) কিংবদন্তির
(D) নীতিকথা ।
উত্তরঃ (C) কিংবদন্তির

21.ভারত হলো বিশ্ব সভ্যতার লীলাভূমি — এই উক্তিটি কার ?
(A) এলটন
(B) কার
(C) ব্রদেল
(D) ভলতেয়ার।
উত্তরঃ (D) ভলতেয়ার ।

22.পুরাণ বিষয়ক তত্ত্বকে বলা হয়—
(A) জাদুবিদ্যা
(B) প্রেততত্ত্ব
(C) পুরাণতত্ত্ব
(D) কোনোটিই নয় ।
উত্তরঃ (C) পুরাণতত্ত্ব

23.গ্রিসের একটি অন্যতম কিংবদন্তি চরিত্র ছিল—
(A) রবিন হুড
(B) নোয়া
(C) হারকিউলিস
(D) রাবণ ।
উত্তরঃ (C) হারকিউলিস

23.জাদুঘরের প্রথম উৎপত্তি হয়—
(A) ইংল্যান্ডে
(B) জার্মানিতে
(C) ফ্রান্সে
(D) গ্রিসে ।
উত্তরঃ (D) গ্রিসে ।

24.‘ ইলিয়ড ’ ও ‘ ওডিসি ‘ মহাকাব্য রচনা করেছিলেন—
(A) ব্যাস
(B) হোমার
(C) বাল্মিকী
(D) হেরোডোটাস ।
উত্তরঃ (B) হোমার

25.একটি প্রাচীন জাদুঘরের উদাহরণ হলো—
(A) এননিগালডি নান্না
(B) ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম
(C) ভ্যাটিকান মিউজিয়াম
(D) লুভর মিউজিয়াম ।
উত্তরঃ (A) এননিগালডি নান্না

26.জাতীয় প্রতিকৃতি প্রদর্শশালা অবস্থিত –
(A) লন্ডনে
(B) প্যারিসে
(C) শিকাগো
(D) ফ্লোরেন্সে ।
উত্তরঃ (A) লন্ডনে

27.‘ অক্সফোর্ড হিস্ট্রি অব ইন্ডিয়া ‘ গ্রন্থটি রচনা করেন—
(A) ভিনসেন্ট স্মিথ
(B) ই . এইচ কার
(C) জন স্টুয়ার্ট মিল
(D) কেউ নন ।
উত্তরঃ (A) ভিনসেন্ট স্মিথ

28.আলবেরুনির লেখা গ্রন্থটির নাম—
(A) রাজতরঙ্গিণী
(B) হর্ষচরিত
(C) তহকিক – ই – হিন্দ
(D) কোনোটিই নয় ।
উত্তরঃ (C) তহকিক – ই – হিন্দ

29.রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ জীবনস্মৃতি ‘ হলো একটি—
(A) লোককথা
(B) কিংবদন্তি
(C) স্মৃতিকথা
(D) কাব্যগ্রন্থ ।
উত্তরঃ (C) স্মৃতিকথা

30.হিস্ট্রি অব ব্রিটিশ ইন্ডিয়া ‘ গ্রন্থটি রচনা করেন—
(A) সুমিত সরকার
(B) জেমস মিল
(C) জন স্টুয়ার্ট মিল
(D) জ্যাকব গ্রিম ।
উত্তরঃ (B) জেমস মিল

31.তহকিক – ই হিন্দ প্রশ্ন : লুভর মিউজিয়াম ‘ অবস্থিত ছিল—
(A) লন্ডনে
(B) প্যারিসে
(C) ফ্লোরেন্সে
(D) কলকাতায়
উত্তরঃ (B) প্যারিসে

32.কেম্ব্রিজ হিস্ট্রি অব ইন্ডিয়া গ্রন্থের রচয়িতা ছিলেন –
(A) এলফিনস্টোন
(B) জন ম্যালকম
(C) ডডওয়েল
(D) ম্যালেসন ।
উত্তরঃ (C) ডডওয়েল

33.দক্ষিণারঞ্জন বসুর ‘ ছেড়ে আসা গ্রাম ‘ হলো একটি –
(A) লোককথা
(B) কিংবদন্তি
(C) স্মৃতিকথা
(D) পৌরাণিক কাহিনি ।

উত্তরঃ (C) স্মৃতিকথা

34.“ সব ইতিহাস হলো সমকালীন ইতিহাস ” —এই উক্তিটি কার ?
(A) ক্লোচের
(B) র্যাঙ্কের
(C) র্যালের
(D) ই.এইচ . কার – এর ।
উত্তরঃ (A) ক্লোচের

35.‘ What is History- এর লেখক হলেন—
(A) ই.এইচ . কার
(B) স্যামুয়েল
(C) উইলিয়াম কেরি
(D) ঐতিহাসিক রিড ।
উত্তরঃ (A) ই.এইচ . কার

36.ভারতীয় ইতিহাসের জাতীয়তাবাদী ব্যাখ্যাকার হলেন—
(A) রমেশচন্দ্র মজুমদার
(B) জেমস মিল
(C) রামশরণ শর্মা
(D) রণজিৎ গুহ ।
উত্তরঃ (A) রমেশচন্দ্র মজুমদার

1. প্রশ্ন: ‘ইতিহাস’ শব্দটি কোন ভাষা থেকে উদ্ভূত?
উত্তর: গ্রিক ভাষা।

2. প্রশ্ন: ‘মিথ’ শব্দটির অর্থ কী?
উত্তর: পৌরাণিক বা কাল্পনিক কাহিনী।

3. প্রশ্ন: ‘রাজতরঙ্গিণী’ গ্রন্থের রচয়িতা কে?
উত্তর: কলহন।

4. প্রশ্ন: ‘হিস্ট্রি অব ব্রিটিশ ইন্ডিয়া’ গ্রন্থটি কে রচনা করেছেন?
উত্তর: জেমস মিল।

5. প্রশ্ন: ‘জীবনের জলসাঘরে’ কার স্মৃতিকথা?
উত্তর: মান্না দে।

6. প্রশ্ন: ‘লুভর মিউজিয়াম’ কোথায় অবস্থিত?
উত্তর: প্যারিস, ফ্রান্স।

7. প্রশ্ন: ‘ইতিহাসের জনক’ কাকে বলা হয়?
উত্তর: হেরোডোটাস।

8. প্রশ্ন: ‘What is History’ গ্রন্থের লেখক কে?
উত্তর: ই. এইচ. কার।

9. প্রশ্ন: ‘এশিয়াটিক সোসাইটি’ কে প্রতিষ্ঠা করেন?
উত্তর: স্যার উইলিয়াম জোন্স।

10. প্রশ্ন: ‘মিউজিয়াম’ শব্দটির উৎস কী?
উত্তর: গ্রিক শব্দ ‘মউসিয়ন’।

11. প্রশ্ন: ‘পঞ্চতন্ত্র’ গ্রন্থের রচয়িতা কে?
উত্তর: বিষ্ণু শর্মা।

12. প্রশ্ন: ‘ঠাকুরমার ঝুলি’ কার রচনা?
উত্তর: দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার।

13. প্রশ্ন: ‘সেদিনের কথা’ কার স্মৃতিকথা?
উত্তর: মণিকুন্তলা সেন।

14. প্রশ্ন: ‘ইতিহাসমালা’ গ্রন্থটি কে রচনা করেন?
উত্তর: উইলিয়াম কেরি।

15. প্রশ্ন: ‘তহকিক-ই-হিন্দ’ গ্রন্থের রচয়িতা কে?
উত্তর: আলবেরুনি।

16. প্রশ্ন: ‘অক্সফোর্ড হিস্ট্রি অব ইন্ডিয়া’ গ্রন্থটি কে রচনা করেন?
উত্তর: ভিনসেন্ট স্মিথ।

17. প্রশ্ন: ‘হিস্ট্রি অব হিন্দুস্তান’ গ্রন্থের রচয়িতা কে?
উত্তর: আলেকজান্ডার ডাও।

18. প্রশ্ন: ‘রাজতরঙ্গিণী’ কোন অঞ্চলের ইতিহাস বর্ণনা করে?
উত্তর: কাশ্মীর।

19. প্রশ্ন: ‘হিস্ট্রি অব ব্রিটিশ ইন্ডিয়া’ গ্রন্থটি কত সালে প্রকাশিত হয়?
উত্তর: ১৮১৭ সালে।

20. প্রশ্ন: ‘জীবনের জলসাঘরে’ গ্রন্থটি কত সালে প্রকাশিত হয়?
উত্তর: ১৯৯২ সালে।

21. প্রশ্ন: ‘লুভর মিউজিয়াম’ কোন সালে প্রতিষ্ঠিত হয়? উত্তর: ১৭৯৩ সালে।

22. প্রশ্ন: ‘What is History’ গ্রন্থটি কত সালে প্রকাশিত হয়?
উত্তর: ১৯৬১ সালে।

23. প্রশ্ন: ‘এশিয়াটিক সোসাইটি’ কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়?
উত্তর: ১৭৮৪ সালে।

24. প্রশ্ন: ‘মিউজিয়াম’ শব্দটির অর্থ কী?
উত্তর: সংগ্রহশালা।

25. প্রশ্ন: ‘পঞ্চতন্ত্র’ কোন ধরনের গ্রন্থ?
উত্তর: লোককাহিনির সংকলন।

26. প্রশ্ন: ‘ঠাকুরমার ঝুলি’ কোন ধরনের সাহিত্য?
উত্তর: রূপকথা।

27. প্রশ্ন: ‘সেদিনের কথা’ কোন ধরনের রচনা?
উত্তর: স্মৃতিকথা।

1.মিথ ( পুরাকাহিনি ) ও লিজেন্ড ( কিংবদন্তি ) বলতে কী বোঝো ? অতীত বিষয়ে মানুষের ধারণাকে এরা কীভাবে রূপদান করে ?

  • উত্তরঃ মিথ :- সৃষ্টির আদিলমের নানা কাহিনির বিবরণ যে ঐতিহাসিক উপাদানগুলিতে পাওয়া যায় তাকে পৌরাণিক কাহিনি বা পুরাকাহিনি ( মিথ ) বলে । মিথ সাহিত্যের প্রাথমিক রূপ বা মৌখিক ইতিহাস । অপরিণত বুদ্ধির মানুষ এই ধরনের ধর্মীয় অলৌকিক কল্পকাহিনি রচনা ও প্রচার করেছে ।
  • লিজেন্ড : কোনো অঞ্চলের কোনো ঘটনা বা চরিত্রকে কেন্দ্র করে যে কাহিনি যা সেখানকার মানুষ বংশপরম্পরায় মনে রাখে , বিশ্বাস করে ও প্রচার করে চলে তাকে কিংবদন্তি বলে । ইংরেজিতে একেই বলা হয় লিজেন্ড । আসলে এই ধরনের বীরগাথা বা কিংবদন্তি হলো সত্য , মিথ্যা ও সম্ভাবনার মিলিত রূপ । ফলে যা ঘটেছে তার পরিবর্তে অনেক সময় কিংবদন্তিতে যা ঘটা উচিত ছিল তার বর্ণনা থাকে বেশ মনোগ্রাহী ভাষায় ।মানুষের ধারণা রূপায়ণে মিথ ও কিংবদন্তি :
  • মিথ : পুরাকাহিনিগুলির বিষয়বস্তু কতটা ঐতিহাসিকভাবে সত্য বা মিথ্যা তা যাচাই করা খুব কঠিন । ইদানীং এগুলিকে ভিত্তিহীন বলে অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন । তবুও মানবধর্ম ও সংস্কৃতির ইতিহাসে মিথগুলির বিশেষ গুরুত্ব স্বীকার করেন অনেকেই ।
  • সত্য ঐতিহাসিক উপাদান : পুরাকাহিনিতে ইতিহাসের বহু সত্য ও যথার্থ উপাদান লুকিয়ে রয়েছে । গ্রিসের পুরাকাহিনিতে তাদের দেবতা , বীরপুরুষ ও পূর্বপুরুষের কথা ব্যক্ত হয়েছে । এই সূত্রেই ট্রয় নগরী ও ট্রয়ের যুদ্ধক্ষেত্র নির্ণয় করা সম্ভব হয়েছে ।
  • সময়কাল নির্ণয় : পুরাকাহিনির সঙ্গে তুলনামূলক পদ্ধতিতে যাচাই করে ইতিহাসের অনেক সাল , তারিখ নির্ণয় করা সম্ভব হয়েছে ।
  • বংশলতিকা : পুরাণ থেকে প্রাচীন রাজবংশের বংশলতিকা জানা যায় । ভারতীয় পুরাণেও অনেক রাজবংশের নাম ও পরিচয় রয়েছে । এ নিয়ে বিতর্ক সত্ত্বেও ড . রণবীর চক্রবর্তী মনে করেন — পুরাণে উল্লিখিত রাজবংশগুলির অস্তিত্ব বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্বীকৃত সত্য ।
  • ধারাবাহিকতা : পুরাকাহিনি ইতিহাসের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে । পুরাকাহিনিতে বর্ণিত মানবসংস্কৃতি – সংক্রান্ত বহু গল্প বংশপরম্পরায় ধারাবাহিকতা রক্ষা করে আজও প্রচলিত । আধুনিক সংস্কৃতির ভিত্তি সেই প্রাচীন সংস্কৃতি । ফলে পুরাকাহিনিতে বর্ণিত কাহিনিকে সত্য বলে ধরে নেওয়া হয় ।
  • কিংবদন্তি : মূলত মৌখিক ঐতিহাসিক উপাদান কিংবদন্তির গুরুত্ব নিম্নরূপ — :
  • আনন্দদান : কিংবদন্তি আজও লোকসমাজকে আনন্দ দিয়ে চলেছে । আনন্দদায়ক বলেই বংশপরম্পরায় বর্তমান সময়েও প্রচলিত এবং ঐতিহাসিক সূত্র জানতে সহায়ক হয় কিংবদন্তিগুলি ।
  • শিক্ষাদান : অতীতের নৈতিকতা , বীরত্ব , কিংবদন্তি থেকে জানা যায় । আধুনিক মানুষও নৈতিকতার শিক্ষা লাভ করে কিংবদন্তি থেকে ।
  • ঐতিহাসিক ভিত্তি : রুপকথার ন্যায় কিংবদন্তি পুরোপুরি কাল্পনিক নয় । কিংবদন্তির বাস্তবতা রয়েছে । প্রসঙ্গত , বাংলার কিংবদন্তি চরিত্র রঘু ডাকাতের কালী পুজোর সূত্র ধরে একটি কালী মন্দিরকে শনাক্ত করা হয়েছে । তাই কিংবদন্তির কাহিনি অনেক বেশি ঐতিহাসিক উপাদান সমৃদ্ধ একথা বলা যায় ।

(2)কিংবদন্তি বা বীরগাথা কাকে বলে ? এর বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব লেখো ।

  • উত্তরঃ- কিংবদন্তি / লেজেন্টের সংজ্ঞা :- কিংবদন্তি বা লেজেন্টের সংজ্ঞা প্রসঙ্গে প্রাচীন সাহিত্যগুলিতে বলা হয়েছে , পূর্বকালে বিশেষ কোনো ভোজে – উৎসবে যখন কোনো সন্ন্যাসী বা ধর্মগুরুর জীবনবৃত্তান্ত কথিত বা গীত হতো তখন তার নাম ইতো কিংবদন্তি । সাধারণভাবে বলা যায় ইতিহাস বা কল্পনার মিশ্রণে লৌকিক । কথাসাহিত্যের রূপ – বৈশিষ্ট্য থেকে আগত কাহিনি হলো কিংবদন্তি ।
  • কিংবদন্তির বৈশিষ্ট্য :
    উৎসগত : বহু পণ্ডিতের মতে , সামাজিক বিবর্তনের পথেই কিংবদন্তির উদ্ভব মূলত পুরাকাহিনিই পরবর্তীকালে কিংবদন্তির রূপ নিয়ে থাকে ।
  • বীরত্বমূলক কাহিনির নায়ক : কিংবদন্তির মাধ্যমে মূলত অতীতের কোনো বীর | নায়কের বীরত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ডকেই তুলে ধরা হয় । তারা ঈশ্বরের মতো সীমাহীন শক্তির অধিকারী থাকতেন বলে কিংবদন্তি কোনো প্রামাণ্য চরিত্র নয় ৷
    লোক ও মনুষ্যজাত গল্প : কিংবদন্তি আসলে লোকসংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত । জনগণের মুখে প্রচলিত বিভিন্ন গল্পের দ্বারা কিংবদন্তি ছড়িয়ে পড়ে । আসলে কিংবদন্তি হলো | মানুষের জীবনের যথার্থ প্রতিফলন ।
  • অতিরঞ্জন : কিংবদন্তিতে ছোটো – বড়ো ঘটনাগুলিকেই অতিরঞ্জিত করা যায় । বলা যায় , কিংবদন্তি বাস্তব ও কল্পিত ঘটনার সংমিশ্রণে গঠিত টুকরো টুকরো কথা , যেখানে সত্য মিথ্যা যা – ই থাকুক না কেন মানুষ তা বিশ্বাস করে ।
  • বিস্ময় ও কল্পনা : কিংবদন্তির প্রেক্ষাপট রচনায় সাহায্য করে থাকে বিস্ময় ও কল্পনা । আসলে কিংবদন্তির বিস্ময়কর কাহিনি আমাদের কল্পণার জগতে নিয়ে যায় । কারণ কিংবদন্তির ঘটনায় সময়ের সাথে সাথে কল্পনার রং মিশিয়ে তাকে কাল্পনিক করে তোলে ।
  • কিংবদন্তির গুরুত্ব : কিংবদন্তির যথার্থতা ও ঐতিহাসিক সত্যতা নিয়ে সন্দেহ থাকলেও তা একেবারে গুরুত্বহীন নয় ।
  • ঐতিহাসিক তথ্যের উৎস : লোকমুখে পুরুষানুক্রমে বিভিন্ন কাহিনি প্রচারিত হলেও প্রাথমিকভাবে সেগুলির মধ্যে ইতিহাসের তথ্যসূত্র লুকিয়ে থাকে । আমরা বেশ কিছু ঐতিহাসিক তথ্যের সূত্রও এর থেকে পেয়ে থাকি ।
  • আনন্দদান : কিংবদন্তির বিভিন্ন অলৌকিক ও কাল্পনিক ঘটনা পাঠ করে আমরা আনন্দ পেয়ে থাকি ।
  • প্রবহমাণ ঐতিহ্য : একটি দেশ বা জাতির নির্দিষ্ট পরিমণ্ডলে আবদ্ধ না থেকে কিংবদন্তি দেশান্তরে ছড়িয়ে পড়ে । একাধিক অঞ্চলের ঐতিহ্যের মধ্যে কিংবদন্তি গড়ে উঠলেও তা পরবর্তীকালে প্রবহমাণ ঐতিহ্যে পরিণত হয় ।
  • শিক্ষাদানে : কিংবদন্তি চরিত্রগুলির কর্মকাণ্ড আমাদেরকে নৈতিক শিক্ষাদান করে একথা বলা যেতেই পারে ।

(3)লোককথা কাকে বলে ? অতীত সময়কে তুলে ধরার ক্ষেত্রে লোককথার ভূমিকা বিশ্লেষণ করো ।

  • উত্তরঃ- অতীতসময়েরঘটনাবলির পূর্ণরূপ তুলে ধরার ক্ষেত্রে লোককথাতাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে । লোকমুখে প্রচলিত কথাই সাধারণত লোককথা নামে পরিচিত । কার্ল টমলিনসন – এর মতে “ মানুষের জীবন ও কল্পনার সংমিশ্রণে যেসকল গল্পগাথা গড়ে ওঠে তা – ই হলো লোককথা । ”
  • অতীত সময়কে তুলে ধরার ক্ষেত্রে লোককথার ভূমিকা :
  1. ছোটোবেলা থেকেই মানুষ বিভিন্ন পৌরাণিক গল্পগাথা বড়োদের মুখে শুনে থাকে । কিছু কিছু ঘটনা বা গল্প মানুষের মুখে মুখে যুগ যুগ ধরে বেঁচে থাকে । আর এইভাবেই লোককথা অতীত ইতিহাসকে তুলে ধরতে সাহায্য করে ।
  2.  লোককথা কল্পজগৎ সৃষ্টি করে অতীতের প্রতি আগ্রহী করে । নিত্যদিন এই লোককথা কথিত হয় কিন্তু পুরনো হয় না , নতুনত্ব বজায় থাকে ।
  3. কোনো দেশের কোনো সমাজে সৃষ্টি হওয়া লোককথাগুলির সেই সমাজের সামাজিক – সাংস্কৃতিক – ধর্মীয় প্রভৃতি বিষয়ে যথেষ্ট প্রভাব পড়ে । ফলে সেই সমাজের সামাজিক ও ধর্মীয় ঐতিহ্য কেমন ছিল তা লোককথা থেকে জানা যায় ।
  4. লোককথার মাধ্যমে মানুষ অতীতের বিভিন্ন ঘটনা সম্পর্কে শুনে আনন্দ পেয়ে থাকে । এই আনন্দ যুগ যুগ ধরে ধারাবাহিকভাবে লক্ষ করা যায় ।
  5. লোককথা থেকে অতীত সমাজের বিভিন্ন ঘটনার ছবি বর্তমান সমাজে লক্ষ করা যায় । কারণ লোককথা বিভিন্ন সামাজিক , ঐতিহাসিক ঘটনার অনুকরণ করে থাকে ।
  6. প্রতিটি মানুষের জীবনে চলার পথে লোককথা যথেষ্ট শিক্ষাদান করে যা অতীত ইতিহাসকে তুলে ধরার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।
  7. লোককথার কাহিনিতে মানুষের সঙ্গে বিভিন্ন ভৌতিক চরিত্র যেমন- পরি , দৈত্য , ডাইনি প্রভৃতি থাকে । মানুষের সামনে লোককথা এই সকল ভৌতিক চরিত্রকে তুলে ধরতে সাহায্য করে ।

(4) অতীতকে স্মরণ করার ক্ষেত্রে কিংবদন্তি বা মিথ এবং স্মৃতিকথার ভূমিকা আলোচনা করো ।

উত্তরঃ- মিথ :- মিথ শব্দটির নির্দিষ্ট কোনো সংজ্ঞা নেই । বিভিন্ন ঐতিহাসিক একাধিক দৃষ্টিকোণ থেকে মিথের সংজ্ঞা দিয়েছেন । তবে মিথ জনশ্রুতির একটি প্রধান অংশ । গ্রিক শব্দ Muthos থেকে Myth ( মিথ ) শব্দটি এসেছে । প্রাচীন কাল থেকে সমাজবদ্ধ মানুষ বিভিন্ন কাল্পনিক ও অলৌকিক গল্প রচনা করে । সেগুলি দীর্ঘ শতকব্যাপী প্রচারিত হতে থাকে যা সাধারণভাবে মিথ নামে পরিচিত ।

  • অতীত স্মরণ করার ক্ষেত্রে মিথের ভূমিকা : –
    ইতিহাসভিত্তিক উপাদান সংগ্রহ :-
    মিথের মাধ্যমে উঠে আসা কাহিনিগুলিকে ঐতিহাসিক উপাদানের সূত্র হিসাবে ধরা হয় । যেমন- মিথের কাহিনির সূত্র ধরেই আধুনিক ঐতিহাসিকগণ ট্রয় নগরী বা ট্রয় যুদ্ধের স্থান নির্ণয় করেছেন । আবার ভারতে প্রচলিত মৌর্য সম্রাট অশোক , রানি দুর্গাবতী , মীরাবাঈ – এর বীরত্বের কাহিনি জাতীয় বীরের মর্যাদায় তাঁদের উন্নীত করে । এসব জানা যায় মিথ থেকে ।
  • সময়কাল নির্ণয় : তুলনামূলক যাচাই পদ্ধতি প্রয়োগ করে মিথের কাহিনিগুলি থেকে ইতিহাসের বহু সন , তারিখ নির্ণয় করা সম্ভব হয়েছে ।
  • বংশতালিকা প্রস্তুতিতে : মিথের ছোটো – বড়ো কাহিনিগুলি থেকে প্রাচীন ভারতের বিভিন্ন বংশতালিকা পাওয়া যায় ।
  • বিশ্বজনীনতা : কিংবদন্তি বা মিথের বিবরণ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে সম্পর্কের আভাস পাওয়া যায় । বিশ্ব সৃষ্টি , প্রাকৃতিক বিপর্যয় প্রভৃতি ঘটনার আভাসও এই কাহিনিগুলি প্রদান করে ।
  • স্মৃতিকথা : বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের ঐতিহাসিক ঘটনার সঙ্গে যুক্ত বা ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী কোনো ব্যক্তির অতীত স্মৃতি থেকে ঘটনাটির যে বিবরণ পাওয়া যায় তাকে স্মৃতিকথা বলা হয় ।
  • অতীত স্মরণ করার ক্ষেত্রে স্মৃতিকথার ভূমিকা :
  • নির্দিষ্ট স্থান ও সময়কালের ধারণা : বেশিরভাগ স্মৃতিকথা থেকে স্থান কাল – পাত্র সম্পর্কে অনেক ধারণা পাওয়া যায় । কোনো ব্যক্তির স্মৃতিচারণায় তৎকালীন সময়ের বিভিন্ন বিষয় প্রতিফলিত হতে দেখা যায় ।
  • বাস্তবভিত্তিক ধারণা : স্মৃতিকথা কোনো কাল্পনিক ঘটনা নয় , এর বাস্তব ভিত্তি অনেক বেশি । ভারতবর্ষ স্বাধীন হবার সময়ে উদ্বাস্তু জীবনযন্ত্রণার মর্মস্পর্শী সত্য বহু মানুষের স্মৃতিকথা থেকে জানা যায় ।
  • নির্দিষ্ট ব্যক্তিত্বের জীবনী : স্মৃতিকথা থেকে কোনো ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বের বা সাধারণ মানুষের জীবনের বিভিন্ন ঘটনার সত্যতা প্রকাশ পায় । স্মৃতিকথায় কোনো ঘটনার অতিরঞ্জন করে দেখানো হয় না ।
  • ইতিহাসের উপাদান সংগ্রহ : ইতিহাস রচনার অন্যতম উপাদান হলো স্মৃতিকথা , কোনো আঞ্চলিক ইতিহাস বা তথ্যের অভাব দেখা দিলে স্মৃতিকথাগুলি সহায়ক উপাদানের ভূমিকা পালন করে ।

(5) মিউজিয়ামের ( জাদুঘরের প্রকারভেদ আলোচনা করো অথবা , জাদুঘরের শ্রেণিবিভাগ করো ।

উত্তরঃ- সূচনা জাদুঘর হলো এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন সমূহের সংগ্রহ থাকে । অর্থাৎ যে ভবনে বা গৃহে অতীত দিনের বা অদ্ভূত রকমের বা সহজে দৃষ্টি হয় । না এমন পদার্থের সংরক্ষণ আছে সেটিই জাদুঘর । জাদুঘরকে ইংরেজিতে ‘ Museum ‘ বলে । পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই জাদুঘর আছে । জাদুঘরে প্রাচীনকালের ঐতিহাসিক , বৈজ্ঞানিক ও শৈল্পিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও দুরূহ পদার্থ সমূহের সংগ্রহ করে সংরক্ষিত করা হয় ।

  • জাদুঘরের প্রকারভেদ :- জাদুঘরগুলিতে যেমন- ঐতিহাসিক , শৈল্পিক বৈজ্ঞানিক , প্রাকৃতিক , সামুদ্রিক , স্মৃতিমূলক , যুদ্ধাস্ত্র , শিশুভিত্তিক , বৃক্ষ , প্রাণী প্রভৃতি বিষয়ক নানারকম বস্তু । সমূহ থাকে , সেই কারণবশত এগুলির ওপর ভিত্তি করে এক একটি জাদুঘর গঠিত হয়েছে
  • প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর :- প্রাচীনকালে আদিম মানুষের ব্যবহারকারী নানা রকম জিনিস তাদের তৈরী অস্ত্রশস্ত্র , তাদের ঘর বাড়ির ধ্বংসাবশেষ , তাদের অলংকার , এছাড়াও অন্যান্য জিনিসপত্র প্রত্নতাত্ত্বিকরা খনন কার্যের মাধ্যমে পেয়ে থাকেন সেগুলি খুবই যত্নসহকারে জাদুঘরে সংরক্ষণ করে রাখে । একেই প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর বলে । আবার প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর দু – ধরনের হয় । প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরের বস্তুসামগ্রী অর্থাৎ জনবসতির ধ্বংসাবশেষ , ভাস্কর্য এবং নানারকম চিত্র প্রভৃতি প্রাচীনকালের মানুষেরা যেসব জায়গায় বসবাস করত অর্থাৎ খোলা আকাশের নীচে বা খোলা জায়গায় লক্ষ্য করা যায় ।
  • ইতিহাসভিত্তিক জাদুঘর : প্রাচীন বা অতীত কালে বসবাসকারী মানুষের বিভিন্ন নিদর্শনগুলি প্রত্নতাত্ত্বিকরা খনন কার্যের মাধ্যমে সংরক্ষণ করে রাখে , যে জাদুঘরে তা ইতিহাস ভিত্তিক জাদুঘর বলে । এই ইতিহাসভিত্তিক জাদুঘরের উদাহরণ- ন্যাশনাল মিউজিয়াম অফ আফ্রিকান আমেরিকান হিস্ট্রি অ্যান্ড কালচার ।
  • ঐতিহাসিককেন্দ্রিক জাদুঘর : ঐতিহাসিক জাদুঘর হলো ইতিহাসকে ভিত্তি করে অর্থাৎ এটি ইতিহাসেরই একটি ভাগ । প্রাচীনকালের বিভিন্ন সময়ের প্রত্নতাত্ত্বিক পদার্থ সমূহ , বিভিন্ন নথিপত্র , বিভিন্ন নিদর্শন , সেই সময়কার রাজা মহারাজার ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের প্রত্ন সামগ্রী তাদের ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্র , পোশাক – পরিচ্ছদ , তাদের শাসনকার্য পরিচালনার জন্য নানা নথিপত্র ইত্যাদি যে প্রতিষ্ঠানে সংগ্রহ করে সংরক্ষিত থাকে সেটিই হলো ঐতিহাসিক জাদুঘর । ঐতিহাসিক জাদুঘরের উদাহরণ হলো- পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার হাজার দুয়ারি ।
  • শৈল্পিক জাদুঘর : জাদুঘর মানেই অতীত বা বর্তমানের নানা দুরূহ পদার্থের প্রদর্শন । শৈল্পিক অর্থাৎ শিল্পভিত্তিক মানুষের তৈরী নানা কারুকার্যময় চিত্র , ভাস্কর্য , মূর্তি এবং মাটির তৈরি নানারকম সৌন্দর্য জিনিস । এছাড়া প্রাচীনকালে রাজা মহারাজারা তাদের ব্যবহৃত মুদ্রায় নানারকম ছবি এঁকে রাখতেন , এরফলে সেই মুদ্রা থেকে রাজাদের নানা কাহিনির পরিচয় পাওয়া যেত । অর্থাৎ প্রাচীন মুদ্রা ইত্যাদি যে ভবনের মাধ্যমে সংগৃহীত হয়ে সংরক্ষিত করা হয় সেই ভবনকেই শৈল্পিক জাদুঘর বলে । এই জাদুঘরের উদাহরণ হলো- ১৬৮৩ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাশমোলিয়ান জাদুঘর নামে এই শৈল্পিক জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠিত করেন ।
  • যুদ্ধাস্ত্র বিষয়ক জাদুঘর : প্রাচীন থেকে বর্তমান সকল রকম যুদ্ধাস্ত্র এবং যুদ্ধের নানারকম পোশাক পরিচ্ছদ প্রভৃতি নিদর্শন যুদ্ধাস্ত্র বিষয়ক জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে । এই জাদুঘরের উদাহরণ হলো – কানাডিয়ান ওয়ার মিউজিয়াম , ইন্টারন্যাশনাল স্পাই মিউজিয়াম ‘ ইত্যাদি ।
  • পরিশেষে বলা যায় , বিভিন্ন ধরনের বিষয়কে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধরনের জাদুঘর গড়ে উঠেছে যেমন – কলকাতার চিড়িয়াখানা যেখানে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর সংরক্ষণ আছে । এছাড়া স্মৃতিসৌধ ও বিভিন্ন ধরনের বিশালাকায় মূর্তির নিদর্শন নিয়েও প্রদর্শনের জন্য মিউজিয়াম গড়ে উঠেছে । আবার ঐতিহাসিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিউইয়ার্ক এর ন্যাশনাল সেপ্টেম্বর ১১ মেমোরিয়াল অ্যান্ড মিউজিয়াম গড়ে উঠেছে । আবার শিশুদেরকে মডেল বা বিভিন্ন প্রদর্শনের মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়ার জন্য কিছু কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সংগ্রহশালা গড়ে তুলেছে । যেমন- ব্রুকলিন চিলড্রেনস মিউজিয়াম ।

(6) জাদুঘর কাকে বলে ? অতীত পুনর্গঠনে জাদুঘরের ভূমিকা আলোচনা করো ।

উত্তরঃ- সাধারণ অর্থে জাদুঘর হলো বিভিন্ন ঐতিহাসিক উপাদানের সংগ্রহশালা , যেখানে ঐতিহাসিক , সাংস্কৃতিক , বৈজ্ঞানিক , শিল্প বিষয়ক প্রভৃতি বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন সংরক্ষণ করে তা জনসাধারণের উদ্দেশ্যে স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয় । এককথায় , বিভিন্ন পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন সংগ্রহ করে সেগুলি যেসব প্রতিষ্ঠান বা ভবনে সংরক্ষণ করে রাখা হয় সেসব প্রতিষ্ঠান বা ভবনকে জাদুঘর বা মিউজিয়াম বলে ।

  • জাদুঘর বা মিউজিয়ামের ভূমিকা : বিশেষ বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে বিভিন্ন প্রকারের মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । মিউজিয়ামগুলি অন্যান্য সামাজিক প্রতিষ্ঠানের মতো বহু বিষয়ে উদ্দেশ্যসাধন করে । বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে মিউজিয়ামগুলি পরিবর্তিত ও পরিবর্ধিত হয়ে ভূমিকা পালন করছে ।
  • মিউজিয়ামের কাজ দুষ্প্রাপ্য পুরাতত্ত্ব থেকে মানবসভ্যতার বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে যে বস্তুসামগ্রী এখন পরিবেশে দেখা যায় না সেগুলি এবং অদ্যাবধি পারিপার্শ্বিক পরিবেশে দেখা যায় এমন বস্তুসামগ্রী গুরুত্ব সহকারে সংগ্রহ ও সংরক্ষণ । এই সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে ইতিহাসের সংগ্রহশালা হিসাবে মিউজিয়াম ভূমিকা পালন করে । ওই বস্তুসামগ্রীর ওপর গবেষণা , ব্যাখ্যা দ্বারা শিক্ষা ও চর্চার ধারা অব্যাহত রাখতে মিউজিয়াম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় ।
  • জাতীয় ও নাগরিক জীবনের গর্বগুলি সংরক্ষণ ছাড়াও শিক্ষা ও গবেষণার অনুপ্রেরণা মিউজিয়ামগুলি । মিউজিয়ামগুলির সংগ্রহের বৈচিত্র্য ও দৃষ্টিভঙ্গি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হচ্ছে । নতুন বিষয় অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে । পুরাতত্ত্ব ও ইতিহাসের বিষয় ছাড়াও বিশেষ কাজ , ব্যক্তিজীবন , ধর্ম , জীববৈচিত্র্য , খনি , জাহাজ , পরিবহণ ইত্যাদি মিউজিয়ামের সংগ্রহে স্থান পেয়েছে । কোনো সময়ের সমগ্র জীবনকে ধরার প্রয়াস লক্ষ্য করা যাচ্ছে ।
  • সমাজ তার অতীতকে জানতে চায় । তার ঐতিহ্যকে জানতে চায় । তার অতীত জেনে পুলকিত ও শিহরিত হয় । কিন্তু অতীত সম্পর্কে অনেক বিষয়ে নীরবতা , বিচ্ছিন্নতা বা অনেক কিছুর অনুপস্থিতি মানুষকে অসুবিধায় ফেলে । এই অসুবিধা দূর করতে সাহায্য করে মিউজিয়াম । শুধু অতীতকে ধরে রাখাই নয় , ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ভাবতে ও অতীতকে বুঝতে সাহায্য করে মিউজিয়াম ।

You may also like

উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় প্রশ্ন ও উত্তর
Higher Secondary History

উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস উনবিংশ ও বিংশ শতকে উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের প্রসার  দ্বিতীয় অধ্যায় প্রশ্ন ও উত্তর

১। Colonia’ শব্দটি কোন ভাষা থেকে উদ্ভূত? (ক) লাতিন শব্ (খ) ইংরেজি শব্দ (গ) গ্রিক শব্দ (ঘ) পোর্তুগিজ শব্দ উত্তর:- লাতিন
সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া চতুর্থ অধ্যায় উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর
Higher Secondary History

সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া চতুর্থ অধ্যায় উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর

১. কার উদ্যোগে কলকাতা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয় ? (ক) ক্লাইভ (খ) কার্টিয়ার (গ) ওয়ারেন হেস্টিংস (ঘ) কর্নওয়ালিশ । উত্তরঃ (গ)