1. বাক্যের মাধ্যম হল-
A)চিন্তা
B)অনুমান
C)ইচ্ছা
D)ভাষা
Ans-D)ভাষা
2. ভাষার উৎস হল-
A)চিন্তা
B)অনুমান
C)ইচ্ছা
D)অনুভূতি
Ans-A)চিন্তা
3. বচনের উৎস হল-
A)চিন্তা
B)বাক্য
C)ইচ্ছা
D)যুক্তি
Ans-B)বাক্য
4. বাক্যের অংশ হল
A)দুটি
B)তিনটি
C)চারটি
D)অসংখ্য
Ans-B)তিনটি
5. বচনের অংশ হল-
A)চারটি
B)তিনটি
C)দুটি
D)অনেক
Ans-A)চারটি
6. ‘সংযোজক’ যার অংশ-
A)বাক্যের
B)বচনের
C)যুক্তির
D)অনুমানের
Ans-B)বচনের
7. ক্রিয়া যার অংশ-
A)বাক্যের
B)বচনের
C)বস্তুর
D)জ্ঞানের
Ans-A)বাক্যের
৪. “বিষয়টি অতি তুচ্ছ”-এটি হল-
A)বাক্য
B)বচন
C)অনুমান
D)যুক্তি
Ans-A)বাক্য
9. সমস্ত নিরপেক্ষ বচনের মর্যাদা হল-
A)ঘোষক বাক্যের মর্যাদাসম্পন্ন
B)বিস্ময়সূচক বাক্যের মর্যাদাসম্পন্ন
C)জিজ্ঞাসাসূচক বাক্যের মর্যাদাসম্পন্ন
D) ইচ্ছাসূচক বাক্যের মর্যাদাসম্পন্ন
Ans-A)ঘোষক বাক্যের মর্যাদাসম্পন্ন
10. সাপেক্ষ বচনের স্বরূপে থাকে
A)একটি শর্ত
B)কোনো শর্ত নয়
C)স্বাভাবিক ঘোষণা
D)বিস্ময়
Ans-A)একটি শর্ত
11. নিরপেক্ষ বচনের স্বরূপে থাকে-
A)নিঃশর্ত
B)ঘোষণা শর্ত
C)বিস্ময়
D)জিজ্ঞাসা
Ans-A)নিঃশর্ত
12. বচনের ব্যস্তুর্থ নির্দেশ করে
A)গুণকে
B)পরিমাণকে
C)সংযোজককে
D)বিধেয়কে
Ans-B)পরিমাণকে
13. ‘ব্যস্তুর্থ’ শব্দটি জড়িত থাকে-
A) বাক্যের সঙ্গে
B)বচনের সঙ্গে
C)যুক্তির সঙ্গে
D)অবধারণের সঙ্গে
Ans-B)বচনের সঙ্গে
14. বচনে ব্যস্তুর্থ হয়-
A)পদের
B)বিধেয়ের
C)গুণের
D)সংযোজকের
Ans-A)পদের
15. “সব বচনই বাক্য, কিন্তু সব বাক্য বচন নয়”-বাক্যটির সত্যমূল্য হল-
A)সত্য
B)মিথ্যা
C)সত্য-মিথ্যা উভয়ই
D)কোনোটিই নয়
Ans-A)সত্য
16. প্রাকল্পিক বচনের প্রথম অংশকে বলা হয়-
A)প্রথম বিকল্প
B)দ্বিতীয় বিকল্প
C)পূর্বগ
D)অনুগ
Ans-C)পূর্বগ
17. প্রাকল্লিক বচনের দ্বিতীয় অংশকে বলা হয়-
A)অনুগ
B)পূর্বগ
C)প্রথম বিকল্প
D)দ্বিতীয় বিকল্প
Ans-A)অনুগ
18. বৈকল্পিক বচনের দ্বিতীয় অংশকে বলা হয়-
A)প্রথম বিকল্প
B)দ্বিতীয় বিকল্প
C)পূর্বগ
D)অনুগ
Ans-B)দ্বিতীয় বিকল্প
19. বৈকল্পিক বচনের প্রথম অংশকে বলা হয়-
A)প্রথম বিকল্প
B)পূর্বগ
C)দ্বিতীয় বিকল্প
D)অনুগ
Ans-A)প্রথম বিকল্প
20. ‘যদি… তবে’ শব্দগুচ্ছ দ্বারা রচিত বচন হল-
A)বৈকল্পিক
B)সংযৌগিক
C)নিরপেক্ষ
D)প্রাকল্পিক
Ans-D)প্রাকল্পিক
21. ‘হয়… অথবা’ শব্দগুচ্ছ দ্বারা রচিত বচন হল-
A)বৈকল্পিক
B)প্রাকল্পিক
C)নিরপেক্ষ
D)দ্বিপ্রাকল্পিক
Ans-A)বৈকল্পিক
22. ‘পদের ব্যস্তুর্থ বলতে বোঝায়-
A)পরিমাণের উল্লেখ
B)জাত্যর্থের উল্লেখ
C)গুণের উল্লেখ
D)পরিমাণ ও গুণের উল্লেখ
Ans-A)পরিমাণের উল্লেখ
23. পদের ধারণাটি যুক্ত-
A)বচনের সঙ্গে
B)সংযোজকের সঙ্গে
C)গুণের সঙ্গে
D)পরিমাণের সঙ্গে
Ans-A)বচনের সঙ্গে
24. একটি বচনে পদ থাকে
A)একটি
B)দুটি
C)তিনটি
D)চারটি
Ans-B)দুটি
25. একটি অবরোহমূলক মাধ্যম যুক্তিতে পদ থাকে
A)একটি
B)দুটি
C)তিনটি
D)চারটি
Ans-C)তিনটি
26. “সকল শিশু হয় সুন্দর”-এটি যে শ্রেণির বচন তা, হল-
A)নিরপেক্ষ শ্রেণির
B)সাপেক্ষ শ্রেণির
C)প্রাকল্পিক শ্রেণির
D)বৈকল্পিক শ্রেণির
Ans-A)নিরপেক্ষ শ্রেণির
27. “সকল ছাত্র হয় বুদ্ধিমান”-এটি যে নিরপেক্ষ বচন, তা হল-
A)সামান্য সদর্থক
B)সামান্য নঞর্থক
C)বিশেষ সদর্থক
D)বিশেষ নঞর্থক
Ans-A)সামান্য সদর্থক
28. “ভালো মানুষ ভালো মন্ত্রী নন”-এটি হল-
A)একটি বাক্য
B)একটি বচন
C)একটি যুক্তি
D)একটি সংক্ষিপ্ত ন্যায়
Ans-A)একটি বাক্য
29. “সকল তিমি হয় স্তন্যপায়ী”-এটি হল-
A)একটি বাক্য
B)একটি বচন
C)একটি অনুমান
D)একটি যুক্তি
Ans-B)একটি বচন
30. “তুমি কি সাধু?” এটা যে ধরনের বাক্য, তা হল-
A)বিস্ময়সূচক
B)জিজ্ঞাসাসূচক
C)ইচ্ছাসূচক
D)নির্দেশসূচক
Ans-B)জিজ্ঞাসাসূচক
31. “আমার শত্রুর সর্বনাশ হোক্”-এটা যে ধরনের বাক্য, তা হল-
A)ইচ্ছাসূচক
B)নির্দেশসূচক
C)জিজ্ঞাসাসূচক
D)ঘোষণাসূচক
Ans-A)ইচ্ছাসূচক
32. “আমি কি ডরাই সখি ভিখারি রাঘবে?”-এটি যে ধরনের বাক্য, তা হল-
A)ঘোষণাসূচক
B)জিজ্ঞাসাসূচক
C)বিস্ময়সূচক
D)ইচ্ছাসূচক
Ans-B)জিজ্ঞাসাসূচক
33. “হয় তুমি ভালো ফল করবে অথবা ফেল করবে”- যে ধরনের বচন, তা হল-
A)প্রাকল্পিক বচন
B)বৈকল্পিক বচন
C)নিরপেক্ষ বচন
D)সংযৌগিক বচন
Ans-B)বৈকল্পিক বচন
34. “যদি বৃষ্টি পড়ে তবে মাটি ভেজে”-এটি যে ধরনের বচন, তা হল-
A)প্রাকল্পিক বচন
B)বৈকল্পিক বচন
C)নিরপেক্ষ বচন
D)সংযৌগিক বচন
Ans-A)প্রাকল্পিক বচন
35. চারটি অংশ আছে যার, তা হল-
A)বাক্য
B)বচন
C)যুক্তি
D)অনুমান
Ans-B)বচন
36. সংযোজকটি যার অংশরূপে গণ্য হয়, তা হল-
A)বাক্য
B)যুক্তি
C)বচন
D)অনুমান
Ans-C)বচন
37. অপ্রকাশিত চিন্তা নিয়ে আলোচনা করে
A)মনোবিজ্ঞান
B)তর্কবিজ্ঞান
C)নীতিবিজ্ঞান
D)সমাজবিজ্ঞান
Ans-C)নীতিবিজ্ঞান
38. চিন্তার বৈধতা নিয়ে আলোচনা করে-
A)মনোবিজ্ঞান
B)নীতিবিদ্যা
C)তর্কবিদ্যা
D)সমাজদর্শন
Ans-A)মনোবিজ্ঞান
39. “সকল মার্জার হয় বিড়াল”-এটি যে ধরনের বচন-
A)পুনরুক্তিমূলক
B)সংজ্ঞামূলক
C)উপমামূলক
D)সাদৃশ্যমূলক
Ans-C)উপমামূলক
40. “তোমার সুমতি হোক”-এটি যে ধরনের বাক্য
A)আদেশসূচক
B)ইচ্ছাসূচক
C)বিস্ময়সূচক
D)জিজ্ঞাসাসূচক
Ans-B)ইচ্ছাসূচক
41. নিরপেক্ষ বচনের স্বরূপে দেখা যায়-
A)কোনো শর্ত নেই
B)কোনো শর্ত আছে
C)কোনো সাধারণ ঘোষণা আছে
D)এদের কোনোটিই নেই
Ans-A)কোনো শর্ত নেই
42. নিরপেক্ষ বচন হল-
A)প্রশ্নসূচক
B)আদেশসূচক
C)ইচ্ছা প্রকাশক
D)ঘোষকমূলক
Ans:-D)ঘোষকমূলক
43. আদর্শ নিরপেক্ষ বচনের অংশ-
A)দুটি
B)তিনটি
C)চারটি
D)পাঁচটি
Ans-C)চারটি
44. যৌগিক বচন-
A)দুই প্রকার
B)তিন প্রকার
C)চার প্রকার
D)পাঁচ প্রকার
Ans-D)পাঁচ প্রকার
45. পরিমাপক অংশটি হল
A)বাক্যের
B)বচনের
C)যুক্তির ন্যায়
D)মহাবাক্যের
Ans-B)বচনের
46. উলটোপালটাভাবে যার অংশগুলিকে উপস্থাপন করা যায়, তা হল-
A)বাক্য
B)বচন
C)সদর্থক বচন
D)নঞর্থক বচন
Ans-A)বাক্য
47. “গোলাপ সুন্দর”-এটি হল-
A)বাক্য
B)বচন
C)অনুমান
D)যুক্তি
Ans-A)বাক্য
48. “সব গোলাপ হয় সুন্দর”-এটি হল-
A)বাক্য
B)অনুমান
C)বচন
D)উদ্দেশ্য
Ans-C)বচন
49. সংযোজনের রূপটি হল-
A)’হওয়া’ ক্রিয়ার বর্তমান কাল
B)’হওয়া’ ক্রিয়ার অতীত কাল
C)’হওয়া’ ক্রিয়ার ভবিষ্যত কাল
D)’হওয়া’ ক্লিয়ার যে-কোনো কাল
Ans-A)’হওয়া’ ক্রিয়ার বর্তমান কাল
50. সংযোজকের কাজ হল
A)উদ্দেশ্য ও বিধেয়ের সংযোগ ঘটানো
B)উদ্দেশ্য ও বিধেয়ের বিচ্ছেদ ঘটানো
C)উদ্দেশ্যের পরিমাণকে নির্দেশ করা
D)বিধেয়ের পরিমাণকে নির্দেশ করা
Ans-A)উদ্দেশ্য ও বিধেয়ের সংযোগ ঘটানো
51. “সকল দার্শনিক হয় চিন্তাশীল”-এর সংযোজক হল-
A)সকল
B)দার্শনিক
C)হয়
D)চিন্তাশীল
Ans-C)হয়
52. “কোনো দার্শনিক নয় চিন্তাশীল”-এর সংযোজক হল-
A)কোনো
B)দার্শনিক
C)নয়
D)চিন্তাশীল
Ans-C)নয়
53. “বাক্য মাত্রই বচন”-বাক্যটি হল-
A)সত্য
B)মিথ্যা
C)সংশয়াত্মক
D)এদের কোনোটিই নয়
Ans-B)মিথ্যা
54. “বচন মাত্রই বচন”-এটি হল-
A)সংশয়াত্মক
B)মিথ্যা
C)সত্য
D)অনিশ্চিত
Ans-C)সত্য
55. “যদি বৃষ্টি পড়ে তবে মাটি ভেজে”-এটি হল-
A)নিরপেক্ষ বচন
B)সাপেক্ষ বচন
C)যুক্তি
D)নির্দেশমূলক
Ans-B)সাপেক্ষ বচন
56. “সকল ছাত্র হয় পড়ুয়া” এটি হল
A)নিরপেক্ষ বচন
B)অনুমান
C)যুক্তি
D)সাপেক্ষ বচন
Ans-A)নিরপেক্ষ বচন
57. বচন হল একধরনের
A)ঘোষকবাচক বাক্য
B)জিজ্ঞাসাসূচক বাক্য
C)নির্দেশসূচক বাক্য
D)ইচ্ছাসূচক বাক্য
Ans-A)ঘোষকবাচক বাক্য
58. সংযোজকের রূপটি হল
A)সদর্থক
B)নঞর্থক
C)সদর্থক বা নঞর্থক
D)সাপেক্ষ
Ans-C)সদর্থক বা নঞর্থক
59. নিরপেক্ষ বচনের বিধেয় অংশটি থাকে-
A)প্রথম অংশে
B)শেষ অংশে
C)যে-কোনো অংশে
D)কোনোটিতেই নয়
Ans-B)শেষ অংশে
60. নিরপেক্ষ বচনের সংযোজকের অবস্থানটি হল-
A)দ্বিতীয় অংশে
B)প্রথম অংশে
C)যে-কোনো অংশে
D)প্রথম ও দ্বিতীয় অংশের মাঝে
Ans-D)প্রথম ও দ্বিতীয় অংশের মাঝে
61. নিরপেক্ষ বচনে পদের সংখ্যা
A)একটি
B)চারটি
C)দুটি
D)তিনটি
Ans-C)দুটি
62. “সকল গোলাপ ফুল হয় সুন্দর”-এটি হল-
A)বচন
B)অবধারণ
C)যুক্তি
D)বাক্য
Ans-A)বচন
1. বাক্য ও বচন কাকে বলে? বাক্যের অংশগুলি কী? উদাহরণ-সহ আলোচনা করো।2+6
উত্তর:-বাক্য:-
মানুষ চিন্তাশীল জীব। মানুষের চিন্তার সার্বিক প্রকাশ ঘটে ভাষার মাধ্যমে। ভাষার মাধ্যমে প্রকাশিত চিন্তাকেই ব্যাকরণগত অর্থে বলা হয় বাক্য (sentence)। এই ভাষাগত বাক্য ব্যবহারের মাধ্যমেই আমরা আমাদের চিন্তার আদানপ্রদান করে থাকি।
বচন:-
বচন হল বাক্যের তর্কবিজ্ঞানসম্মত রূপ। এই তর্কবিজ্ঞানসম্মত রূপই হল বাক্যের পরিশ্রুত রূপ। বচন দ্বারাই গঠিত হয় যুক্তি (argument)। এই যুক্তিই হল তর্কবিদ্যার মূল আলোচ্য বিষয়। বচনকে বলা হয় যুক্তির অঙ্গবাক্য। সুতরাং বলা যায়, যুক্তি গঠনের ক্ষেত্রে বাক্য বা বচনের যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে, তাতে কোনো সন্দেহই নেই।
বাক্যের অংশ:-
বাক্যের মোট তিনটি অংশ থাকে। এই তিনটি অংশ হল যথাক্রমে- উদ্দেশ্য (subject), ক্রিয়া (verb) এবং বিধেয় (predicate)। সাধারণত এই তিনটি অংশ পরস্পর সংযুক্ত হয়ে একটি বাক্যের সৃষ্টি করে। পরিপূর্ণ বাক্যের ক্ষেত্রে এই তিনটি অংশেরই প্রয়োজন ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। যেমন
বাবা যায় বাজারে
উদ্দেশ্য ক্রিয়া বিধেয়
বাক্যের অংশগুলির সংবদ্ধতার নিয়ম:-
বাক্যের অংশগুলির সংবদ্ধতার ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম নেই। সে কারণেই আমরা বাক্যের অংশগুলিকে আমাদের ইচ্ছামতো সংবদ্ধ করে বাক্যের সৃষ্টি করতে পারি। এর ফলে বাক্যের আকারও ভিন্ন ভিন্ন রূপে হতে পারে।
বাক্যাংশের অনুপস্থিতিতেও বাক্য:-
বাক্যের ক্ষেত্রে তিনটি অংশ আছে। এই তিনটি অংশের মধ্যে আমরা প্রথমে উদ্দেশ্যকে, তারপরে ক্রিয়াকে এবং সবশেষে বিধেয়কে সাধারণভাবে উল্লেখ করে থাকি। আবার অনেক সময় এই অংশগুলিকে আমাদের ইচ্ছামতো অন্যভাবেও উল্লেখ করতে পারি। অনেক সময় আবার এই অংশগুলির কোনোটিকে আমরা উহ্য রাখতেও পারি। এর ফলে কিন্তু বাক্যটির মর্যাদার কোনো হানি ঘটে না। যেমন-
বাবা বাজারে-এখানে যায় নামক ক্রিয়াপদের অংশটিকে উহ্য রাখা হয়েছে। এই শব্দটিকে উহ্য রাখলেও আমাদের চিন্তার প্রকাশরূপে বাক্যটির অর্থের কোনো হানি ঘটে না।
2.বচনের বিভিন্ন অংশ বা অবয়বগুলি আলোচনা করো। অথবা, নিরপেক্ষ বচনের অংশগুলি উদাহরণ-সহ আলোচনা করো।
উত্তর
বচনের অংশ বা অবয়ব:-
তর্কবিদ্যায় নিরপেক্ষ যুক্তির মৌল ভিত্তিই হল নিরপেক্ষ বচন। কারণ, নিরপেক্ষ বচনের সমন্বয়েই গঠিত হয় নিরপেক্ষ যুক্তি। এই নিরপেক্ষ বচনের অংশ হল চারটি। এই অংশগুলি হল-① পরিমাণক, ② উদ্দেশ্য, ③ সংযোজক ও ④ বিধেয়। নিরপেক্ষ বচনের যে অংশ ওই বচনের পরিমাণ (Quantity)-কে উল্লেখ করে, তাকে বলে পরিমাণক। যার সম্পর্কে বচনে কিছু ঘোষণা করা হয় তাকে বলা হয় উদ্দেশ্য। যে অংশটি উদ্দেশ্য এবং বিধেয়কে সংযোজন বা যুক্ত করে, তাকে সংযোজক বলে। আমরা বাক্যে যাকে ক্রিয়ারূপে উল্লেখ করি, বচনে তাকেই সংযোজক বলে। অন্যদিকে, উদ্দেশ্য সম্পর্কে যা কিছু বলা বা ঘোষণা করা হয়, তাকেই বিধেয় বলে
অংশগুলির ক্রমিক সংবদ্ধতায় নিরপেক্ষ বচন: নিরপেক্ষ বচনের চারটি অংশকে উল্লিখিতভাবেই পরপর সাজাতে হয়, উলটোপালটাভাবে সাজানো যায় না। এর কোনো অংশ উহ্যও রাখা যায় না। সুতরাং দেখা যায় যে, বচনকে একটি বাঁধাধরা নিয়মের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এর কোনো ব্যতিক্রম সম্ভব নয়। এই চারটি অংশই যে বচনের ক্ষেত্রে অপরিহার্য- তাতেও কোনো সন্দেহ নেই। সেজন্য বচন তৈরির ক্ষেত্রে এই চারটি অংশের গুরুত্বকে কখনোই উপেক্ষা কর
3. বচন কাকে বলে? বচনের বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।
বচন:-বচন হল বাক্যের তর্কবিজ্ঞানসম্মত রূপ। বাক্যে যেমন উদ্দেশ্য ও বিধেয়র মধ্যে একপ্রকার সম্বন্ধ ঘোষিত হয়, বচনের ক্ষেত্রেও উদ্দেশ্য ও বিধেয়র মধ্যে একপ্রকার সম্বন্ধ ঘোষিত হয়। এরূপ সম্বন্ধ সদর্থকভাবেও ঘোষিত হতে পারে, আবার নঞর্থকভাবেও হতে পারে। এদের সম্বন্ধ আবার শর্তসাপেক্ষও হতে পারে, আবার শর্তহীনও হতে পারে। যাই হোক না কেন, এ কথা বলা যায় যে, বচন হল বাক্যের পরিশ্রুত ও তর্কবিজ্ঞানসম্মত রূপ। এই বচনই হল যুক্তির মূল উপাদান।
বচনের বৈশিষ্ট্য:-
বচন বাক্যের পরিশ্রুত ও তর্কবিজ্ঞানসম্মত রূপ হলেও বচনের কতকগুলি মৌলিক বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। এই বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করা হল-
[1] বচনের মূল উৎস হল বাক্য। সুতরাং, বাক্যকেই বচনের ভিত্তি বলা হয়। বাক্য ছাড়া বচনের কোনো অস্তিত্বই হতে পারে না।
[2] প্রত্যেকটি বচনে একটি উদ্দেশ্য এবং একটি বিধেয় থাকে। শুধু উদ্দেশ্যকে নিয়ে অথবা শুধু বিধেয়কে নিয়ে কখনোই বচন গঠিত হতে পারে না।
[3] যে-কোনো বচনেই উদ্দেশ্য ও বিধেয়র মধ্যে একটি সম্বন্ধকে ঘোষণা করা হয় অর্থাৎ, উদ্দেশ্য এবং বিধেয় যে পারস্পরিকভাবে বিচ্ছিন্ন নয়, সেই বিষয়টিকেই উল্লেখ করা হয়।
[4] বচনে উদ্দেশ্য ও বিধেয়র সম্বন্ধকে দু-ভাবে স্থাপন করা যেতে পারে-সদর্থকভাবে এবং নঞর্থকভাবে।
[5] বচনে উদ্দেশ্য এবং বিধেয়র মধ্যে যে সম্বন্ধ প্রতিষ্ঠিত হয়, তা শর্তসাপেক্ষভাবেও হতে পারে, আবার তা শর্তনিরপেক্ষভাবেও হতে পারে। অর্থাৎ, উদ্দেশ্য ও বিধেয়র সম্বন্ধ শর্তাধীন অথবা শর্তহীন-দুই-ই হতে পারে।
[6] বচন যুক্তির উপাদান বা অবয়বরূপে গণ্য হয়। কারণ, যুক্তি গঠিত হয় শুধু বচন দিয়েই। সেকারণেই বচনগুলি যুক্তির অংশরূপে বিবেচিত।
[7] বচনের প্রকৃতি বা স্বরূপের ওপরই যুক্তির স্বরূপ বা প্রকৃতি নির্ভর করে। সেকারণেই বলা হয়, বচন হল যুক্তির প্রকৃতি বা স্বরূপ নির্ণায়ক।
[৪] সমস্ত বচনই বাক্যরূপে গণ্য হলেও, সমস্ত বাক্যকে কখনোই বচনের মর্যাদা দেওয়া যায় না।
[9] বচনের সঙ্গে সত্যতার প্রশ্নটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কারণ, প্রত্যেকটি বচনই হয় সত্যরূপে গণ্য হবে অথবা মিথ্যারূপে গণ্য হবে। সত্য ও মিথ্যা হওয়া ছাড়া বচনের আর তৃতীয় কোনো শর্ত নেই
[10] বচনের সত্যতার ওপর যুক্তির বৈধতা নির্ভরশীল। অর্থাৎ, বচনের সত্য-মিথ্যার সাহায্যেই যুক্তির বৈধতা নির্ণয় করা যেতে পারে।
[11] বচনের প্রয়োগক্ষেত্র বাক্যের প্রয়োগক্ষেত্র অপেক্ষা অনেক কম, কারণ, বচনকে আমরা শুধু তর্কবিদ্যার যুক্তির ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে থাকি। আমাদের দৈনন্দিন ব্যাবহারিক জীবনে এর কোনো প্রয়োগ দেখা যায় না।
4. উদাহরণ-সহ নিরপেক্ষ ও সাপেক্ষ বচনের আলোচনা করো।
উত্তর:-
নিরপেক্ষ ও সাপেক্ষ বচন:-
তর্কবিদ্যায় বচনকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিভাজন করা হয়েছে। সম্বন্ধের দৃষ্টিকোণ থেকে বচনকে দু-ভাগে ভাগ করা হয়েছে- [1] নিরপেক্ষ বচন (categorical proposition) এবং [2] সাপেক্ষ বচন (conditional
proposition)। উদ্দেশ্যের সঙ্গে বিধেয়ের সম্বন্ধের পরিপ্রেক্ষিতেই বচনের এরূপ শ্রেণিকরণ বা বিভাজন করা হয়েছে। বিষয়টিকে তাই এইভাবে উল্লেখ করা যায়
নিরপেক্ষ বচন (Categorical Proposition)
যে বচনে উদ্দেশ্য এবং বিধেয়র সম্বন্দ্ব কোনো শর্তের ওপর নির্ভর করে না, তাকেই বলে নিরপেক্ষ বচন। নিরপেক্ষ শব্দটির শব্দগত বিশ্লেষণ হল- নিঃ + অপেক্ষ নিরপেক্ষ। ‘নিঃ’ শব্দের অর্থ হল ‘নাই’, আর অপেক্ষ শব্দের অর্থ হল শর্ত। সুতরাং, শব্দগত বিশ্লেষণের পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, নিরপেক্ষ বচনের ক্ষেত্রে উদ্দেশ্য ও বিধেয়র সম্বন্ধটি কোনো শর্ত ছাড়াই উপস্থাপিত হয়। এরূপ বচনে তাই কোনো শর্ত ছাড়াই উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিধেয়তে স্বাভাবিকভাবে কিছু স্বীকার বা অস্বীকার করে নেওয়া হয়।
1. রাম হয় সৎ।
2. রাম নয় সৎ।
এই দুটি উদাহরণের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, (1) নং উদাহরণে উদ্দেশ্য তথা রাম সম্পর্কে বিধেয় তথা সৎ বিষয়টিকে কোনো শর্ত ছাড়াই স্বাভাবিকভাবেই স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। আবার (2) নং উদাহরণটিতে উদ্দেশ্য তথা রাম সম্পর্কে বিধেয় তথা সৎ শব্দটিকে কোনো শর্ত ছাড়াই স্বাভাবিকভাবে অস্বীকার করা হয়েছে। সুতরাং, এই দুটি বচনই নিরপেক্ষ বচন রূপে গণ্য।
সাপেক্ষ বচন (Conditional Proposition)
তর্কবিদ্যায় নিরপেক্ষ বচনের বিপরীতে সাপেক্ষ বচনের উল্লেখ করা হয়েছে। যে বচনে উদ্দেশ্য ও বিধেয়র সম্বন্ধ কোনো শর্তের ওপর নির্ভর করে, সেই বচনকেই বলা হয় সাপেক্ষ বচন। সাপেক্ষ শব্দটির শব্দগত বিশ্লেষণ হল- স+ অপেক্ষ = সাপেক্ষ। ‘স’ শব্দটির অর্থ হল সহ বা যুক্ত আর অপেক্ষ শব্দটির অর্থ হল শর্ত। অর্থাৎ, যে বচন শর্তযুক্ত তাকেই বলা হয় সাপেক্ষ বচন। এরূপ বচনে উদ্দেশ্য ও বিধেয়র সম্বন্ধটি তাই একটি শর্তের ওপর নির্ভর করে গড়ে ওঠে। অর্থাৎ কোনো শর্ত ছাড়া উদ্দেশ্য ও বিধেয়র সম্বন্ধটিকে এখানে কোনো ভাবেই ব্যাখ্যা করা যায় না।
উদাহরণ
1. যদি বৃষ্টি পড়ে তবে মাটি ভেজে।
2. হয় অমৃতা কলকাতা যাবে অথবা দিল্লি যাবে।
এই দুটি উদাহরণের মধ্যে (1) নং উদাহরণটিতে দেখা যায় যে, মাটি ভেজা নামক বিষয়টি বৃষ্টি পড়া নামক শর্তের ওপর নির্ভরশীল। আবার
(2) নং উদাহরণটিতে দেখা যায় যে, অমৃতার কলকাতা যাওয়া এবং দিল্লি যাওয়ার বিষয় দুটিও শর্তাধীন। অর্থাৎ, কলকাতা যাওয়া নির্ভর করে দিল্লি না যাওয়ার ওপর, আবার দিল্লি যাওয়া নির্ভর করে। কলকাতা না যাওয়ার ওপর। সুতরাং, এই দুটি বচনই সাপেক্ষ বচনরূপে
তর্কবিদ্যায় সাপেক্ষ ও নিরপেক্ষ বচনের গুরুত্ব
তর্কবিদ্যার মূল কাজ হল যুক্তি নিয়ে আলোচনা করা। এই যুক্তি গঠিত হয় নিরপেক্ষ ও সাপেক্ষ-এই উভয়প্রকার বচন দিয়েই। শুধু নিরপেক্ষ বচন দিয়েও যুক্তি গঠিত হতে পারে, আবার শুধু সাপেক্ষ বচন দিয়েও যুক্তি গঠিত হতে পারে। আবার নিরপেক্ষ এবং সাপেক্ষ এই উভয়প্রকার বচন দিয়েও যুক্তি গড়ে উঠতে পারে। বচনগুলির প্রকৃতির ওপরই যুক্তির প্রকৃতি নির্ণীত হয়। সুতরাং দেখা যায় যে, তর্কবিদ্যায় যুক্তি গঠনের ক্ষেত্রে সাপেক্ষ ও নিরপেক্ষ-উভয়প্রকার বচনেরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে।